সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলার ৫টি কলেজের একটিতেও শহীদ মিনার নেই। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চিত্রও প্রায় একই। ফলে ওইসব প্রতিষ্ঠানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষ দিবসগুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন: মাগুরায় শহীদ মিনারে ‘রাজাকারের’ নাম!
জানা গেছে, সরকারিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করার নির্দেশনা থাকলেও গোয়ালন্দ উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার না থাকায় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। ওইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য দিবস পালন থেকে অনেকটা বঞ্চিত হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: কয়রায় ৯৪ শতাংশ প্রাথমিক স্কুলে নেই শহীদ মিনার
উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, গোয়ালন্দে কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৭৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৫১টি। যার মধ্যে মাত্র ৬টিতে শহীদ মিনার আছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৭টি, যার মধ্যে শহীদ মিনার আছে মাত্র ৫টিতে। এছাড়া কলেজ রয়েছে ৫টি যার একটিতেও নেই কোনো শহীদ মিনার। সব মিলিয়ে ৭৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬২টিতেই নেই শহীদ মিনার। ফলে এসব গুরুত্বপূর্ণ দিবস পালনে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়া হয় গোয়ালন্দ বাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মহিউদ্দিন আনসার ক্লাবসহ অন্যান্য স্থানে।
আরও পড়ুন: বৃহত্তর কুমিল্লার প্রথম শহীদ মিনার ভিক্টোরিয়া কলেজে
উজানচর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ বাবর আলী বলেন, ‘সরকারিভাবে বরাদ্দ না থাকায় এখন পর্যন্ত আমরা শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারিনি। যার কারণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা, বিজয় দিবসসহ বছরের বিশেষ দিবস পালনে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গোয়ালন্দ বাজার অথবা উপজেলা পরিষদ চত্বরে যেতে হয়।’
আরও পড়ুন: মেহেরপুরে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার
সরকারি গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হালিম তালুকদার বলেন, ‘অর্থ সংকটে সৃষ্টিলগ্ন থেকে শহীদ মিনার নির্মাণ সম্ভব হয়নি। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা হলেও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তবে বেসরকারি থাকাকালীন অবস্থায় উদ্যোগ নিলে করার সুযোগ ছিল। বর্তমানে কলেজটি জাতীয়করণ হওয়ায় ইচ্ছা থাকলেও অর্থ ব্যয়ের সুযোগ নেই। সরকারিভাবে নির্দেশনা আসলে, উপজেলা পরিষদের বিশেষ ব্যবস্থায় শহীদ মিনার নির্মাণ সম্ভব। যাতে দ্রুত শহীদ মিনার নির্মিত হয় আমার থেকে জোরালোভাবে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় সাড়ে ১২শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই
এ বিষয়ে অভিভাবক, স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরা জানান, এটা খুব দুঃখজনক। স্কুল, কলেজগুলোতে শহীদ মিনার না থাকার পেছনে ওই সকল প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে, এখানে অর্থের সংকট কোনো বিষয় না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পালনের প্রস্তুতিমূলক সভায় আলোচনা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি রয়েছে যার কারণে এই মুহূর্তে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় প্রয়োজনে ব্যক্তি উদ্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের ব্যাপারে জোর দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন: শহীদ মিনার নেই যশোরের ৬৫০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা মুন্সী বলেন, ‘আরও অনেক আগেই প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা উচিত ছিল। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে আমরা প্রস্তুতিমূলক সভায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতে দ্রুততার সাথে শহীদ মিনার হয় সে চেষ্টা করে যাব। আশা করি আগামী বছরের আগেই সব সম্পন্ন হবে।’