বৈরী আবহাওয়ার শঙ্কায় আগেভাগেই বোরো ধান ঘরে তোলা তোড়জোড় চলছে উপকূলীয় নদী বেষ্টিত ফেনীর সোনাগাজীর কৃষকদের মাঝে। তবে এখনও কাটার উপযোগী ৭০ শতাংশ বোরো ধান জমিতে রয়েছে। বর্তমানে এই অঞ্চলের কৃষকরা ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এর মধ্যেই বৃষ্টি সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চরম শ্রমিক সংকট।
শ্রমিক সংকটের কারণে সময় মতো ধান কাটতে পারছেন না অনেক কৃষক। শুধু তাই নয়, এক মণ ধানের দামে মিলছে না একজন শ্রমিকও। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় কয়েক হাজার কৃষককে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফেনীতে গত এক সপ্তাহ ধরে এক মণ ধান ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু তার বিপরীতে একজন শ্রমিক ১ হাজার থেকে ১২’শ টাকা চাওয়ায় কৃষকেরা চরম লোকসানের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
আরও পড়ুন: লাল বাঁধাকপি চাষ: বদলে দিয়েছে কৃষক বেলালের ভাগ্য
পরশুরাম উপজেলার পৌর এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায়। কিন্তু শ্রমিকদের জনপ্রতি এক হাজার থেকে ১২’শ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। সঙ্গে দুই বেলা খাবার। অন্যান্য খরচ যেমন জমি চাষ, সেচ, চারা, সার, কীটনাশক ও শ্রমিক খরচতো আছেই। এতে আমার ৪০ শতক জমিতে প্রায় ২-৩ হাজার টাকা করে লোকসান হচ্ছে।
সোনাগাজী উপজেলার উপকূলীয় চর চান্দিয়া এলাকার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, এক সময় মঙ্গা প্রবল রংপুর অঞ্চলের ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া গেলেও এখন আর নেই। ফলে এলাকার শ্রমিকরা কৃষকদের কাছে অতিরিক্ত মুজুরি হাকাচ্ছে।
ধান কাটা শ্রমিক কবির আহাম্মদ বলেন, ‘আমি আবুল খায়েরের সঙ্গে (মালিক) ধান কাটার জন্য দৈনিক ১ হাজার টাকা করে পাঁচ দিনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। দুপুরে-রাতে ভাত খাওয়া ও সকালের নাশতাও মালিক বহন করবেন।
পরশুরাম ডাকবাংলা মোড় এলাকার ধান ব্যবসায়ী আবদুল কাইয়ুম জানান, তিনি প্রতিমণ ধান ৬৮০ টাকা করে কিনছেন। ধানের চাহিদা না থাকায় দাম হঠাৎ কমে গেছে। এ ছাড়া শ্রমিক খরচও ওই টাকা থেকে বাদ যাবে।
আরও পড়ুন: হলুদে ছেয়ে গেছে মাঠ, সরিষার বাম্পার ফলনের আশায় কৃষক
পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সত্যনগর গ্রামে দেখা গেছে, কৃষক আবুল কাশেম ছয় জন শ্রমিক নিয়ে বোরো ধান কাটছেন। তিনি বলেন, ধান কাটা শ্রমিক পাওয়া খুব কষ্টের। পেলেও তাদের মজুরি উচ্চমূল্যের। তাই আগামী মৌসুমে আর বোরো চাষাবাদ করবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
পরশুরাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, পরশুরাম উপজেলায় চলতি বছর ৩ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এবার বাম্পার ফলনও হয়েছে।
উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেব রঞ্জন বণিক বলেন, বোরো আবাদের জন্য সবকিছুই অনুকূলে ছিল। বিদ্যুৎ, পানি, সার, বীজ কোনো কিছুরই সমস্যা ছিল না। চলতি মৌসুমে ধানের ফলনও ভালো হয়েছে।
আরও পড়ুন: দেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় সচল গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের পাম্প
ফেনীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তারেক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর ৩০ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। বোরো ধানের দাম কম থাকায় আমরা কৃষকদের ধান ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিচ্ছি। যাতে করে তারা সংরক্ষিত ধান পরে বিক্রি করে দামটা ভালো পান। একই সঙ্গে শ্রমিক সংকট থাকায় কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিনে কৃষকদের সহজভাবে ধান কাটা, মাড়াই, বস্তা প্যাকেটজাতকরণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, শ্রমিক সংকট ও বৈরী আবহাওয়ার শঙ্কায় কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিনে সমতল ভূমিতে ৫০ শতাংশ ও উপকূলীয় এলাকায় ৭০ শতাংশ সরকারিভাবে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে।