বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামীলীগ সরকার সব পরিবর্তন করেছে, সংবিধান পরিবর্তন করেছে। সংবিধানের যেই ধারা ছিল তাকে পরিবর্তন করেছে। তারা এটাকে সম্পুর্ণ আওয়ামী সংবিধানে পরিণত করেছে।
শুক্রবার সকালে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি কার্যালয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের এক সভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সংবিধানের তিনটি অনুচ্ছেদ আছে যে অনুচ্ছেদ সম্পর্কে সংবিধানে সংশোধনী নিয়ে এসেছে, সেখানে কোনদিন হাত দেয়া যাবে না। আজীবন, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন হাত দেয়া যাবে না। অর্থাৎ সংবিধানের যে মৌলিক চরিত্র, এটা একটা প্রজাতন্ত্র। জনগণের ভোটে যে নির্বাচিত সরকার, জনগণ এই সংবিধানের পরিবর্তন সাধন করতে পারেন। এটা আর থাকলো না।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগ ত্রাস করে ক্ষমতায় যায়, সে পরিকল্পনা এবারও করছে তারা।
সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনের একটি পরিবেশ তৈরি করতে বলেন তিনি। এটিই এখন বাংলাদেশের একটি বড় সংকট, এ সংকট নিরসন করুন।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সরাসরি বেগম জিয়াকে ‘হত্যার হুমকি’র শামিল: ফখরুল
ফখরুল বলেন, বিরোধী দলীয় নেত্রীকে পদ্মা সেতুতে নিয়ে টুস করে ফেলে দাও- এটা ভয়ংকর কথা। আইন নেই, কানুন নেই, একজন প্রধানমন্ত্রী তিনি বলে দিলেন টুস করে ফেলে দিতে হবে। এটা মেনে নেয়া সম্ভব হয় না। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং বারবার অনুরোধ করছি যে, দেশের যে পরিবেশ তা দিনদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। সেটা আর খারাপ না করে কমপক্ষে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করুন।
তিনি আরও বলেন, গত পরশু তার প্রত্যাবর্তন দিবসের একটা অনুষ্ঠানে তিনি বিএনপির ব্যাপারে, বিএনপি নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এবং দেশের যারা শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব, আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব তাদের বিরুদ্ধাচারণ করেন। এমনকি পত্রিকার সম্পাদক তাদের বিরুদ্ধে, অর্থনীতিবিদদের বিরুদ্ধেও বলেছেন। আমি এর তীব্র বিরোধিতা করছি, নিন্দা জানাচ্ছি। এটা আ’লীগের স্বভাবসূলভ চরিত্র, সব সময় সন্ত্রাস, ত্রাস করে ক্ষমতায় যায়। সেভাবেই তারা আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পায়তারা শুরু করেছে। ২০১৪ সালে এমন একটা অবস্থা তৈরি করে, ত্রাস করে, সন্ত্রাস করে নির্বাচন করেছিল এবং জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তারা জনগণকে ভোট দেয়ার কোন সুযোগই দেয়নি। ১৫৪ টি আসনেই বিনা ভোটে নির্বাচিত করে। একই ভাবে সারাদেশে সন্ত্রাসী কায়দায় গায়েবী মামলা দিয়ে বিএনপির হাজার হাজার নেতা কর্মীদের গ্রেপ্তার করা ও ১৯ জন প্রার্থীকে বন্দি করা, আদালতকে ব্যবহার করা, নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে আগের রাতেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তারা নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই যাদের ইতিহাস, আজকের না, শুধু ১৯৭৩ সালে যখন আ’লীগের একক আধিপত্য ছিল এবং জনপ্রিয়তা ছিল তখনও কিন্তু তারা নির্বাচনে কাউকে ছাড় দেয়নি। ওই সময় কুমিল্লার দাউদকান্দিতে কোন এক প্রার্থী খন্দকার মোস্তাকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। ওখানকার ব্যালট বাক্স পর্যন্ত হেলিকাপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছিল। একইভাবে রাশেদ খান মেননের আসনেও হয়েছে। এটাই হলো তাদের স্বভাব। এভাবেই তারা শক্তি প্রয়োগ করে, বল প্রয়োগ করে জোর করে ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করতে চায়। সেটা সেই ক্ষমতাটাও তারা নিয়ে চলে গেছে।
আরও পড়ুন: অর্থনৈতিক মন্দা এড়াতে ব্যয়বহুল মেগাপ্রকল্প বাদ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান বিএনপির
তিনি বলেন, ৭৫ সালে আমরা সবাই জানি পার্লামেন্টে ৫ মিনিটেই ক্যু করে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল এই আ’লীগ। এখন তাদের মুখেই যখন গণতন্ত্রের কথা শুনি তখন সেটা একটা হাস্যকর এবং প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। একই ভাবে একজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে যখন তিনি কথা বলেন এটা স্বাধীন যে সাংবাদিকতা সেই স্বাধীনতার বিপক্ষে। তিনি যখন একজন বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদকে কটুক্তি করেন তখন সেটা বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা খারাপ ধারণা তৈরি করে। এমনকি যে অর্থনীতিবিদরা মেগা প্রকল্প নিয়ে কথা বলেছেন, অর্থনীতির অশনী সংকেত নিয়ে কথা বলেছেন তাদেরকেও তিনি গালিগালাজ করতে ছাড়েন নি।
ফখরুল বলেন, ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল আওয়ামী লীগ। ক্ষমতার বাইরে থাকলেই পচনশীল হয় না। বিএনপি হচ্ছে উচ্চগামী একটি দল। আমরা হচ্ছি ঊর্ধ্বগামী দল তা প্রমাণ করার জন্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনই যথেষ্ট। ওবায়দুল কাদেরের কোন কথাকে গুরুত্ব দেই না আমরা। কারণ তিনি নিজে কোন কথা বলেন না। শেখ হাসিনা যা বলেন পাপেটের মত তিনি সেটাই আওড়িয়ে বলেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান, অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফ, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি সরকার মো. নুরুজ্জামান নুরু, সাধারণ সম্পাদক মো. সোহেল রানাসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠের নেতারা।
আরও পড়ুন: নতুন ফসল উঠলেও ভুল নীতির কারণে চালের দাম বাড়ছে: বিএনপি