বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নতুন কর্মসূচি নিয়ে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে তাদের দল নিঃসন্দেহে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ করবে।
তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বরের কর্মসূচি নিয়ে কারও কোনো বিভ্রান্তি থাকা উচিত নয়। কারণ ওইদিন ঢাকায় সমাবেশ করতে হবে।
বিএনপি নেতা আরও বলেন, এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ নতুন করে দুঃশাসন থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখবে।
তিনি বলেন, বর্তমান দানবীয় শাসনকে পরাস্ত করতে এই সমাবেশ থেকে জনগণ আরও নিবিড়ভাবে নতুন কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নামবে।
১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে সামনে রেখে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ভায়োলেন্স অ্যান্ড পলিটিক্স অব ব্লেমিং’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে বিএনপি।
অনুষ্ঠানে ডা. শাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং বর্তমান সরকারের আমলে সহিংসতার ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
ফখরুল বলেন, তাদের দল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
আরও পড়ুন: জনগণ সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে: মির্জা ফখরুল
বিএনপি নেতা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে অবশ্যই ক্ষমতা ছাড়তে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, যাতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত হয়।
সরকার অগ্নি সহিংসতার ষড়যন্ত্র করছে
ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিন আগে ২০১৪-১৫ সালের আন্দোলনে অগ্নিসন্ত্রাসের শিকারদের সঙ্গে বৈঠক করে নাটক মঞ্চস্থ করেছিলেন এবং সেখানে দোষারোপের রাজনীতি সম্পর্কে ভুল ধারণা দিতে কেঁদেছিলেন।
বিএনপি নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের প্রচেষ্টা অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে জনগণের চলমান স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন বন্ধ করার জন্য তার সরকারের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বিএনপির সন্দেহ জাগিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য পেয়েছি যে প্রায় ২০০টি বাসে আগুন দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সহিংসতা প্রতিরোধের নামে প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কিছু ক্যাডার মোতায়েন করা হবে বলেও কিছু ইঙ্গিত আমরা পেয়েছি। আমরা এ বিষয়ে সতর্ক হয়েছি।
বিএনপি নেতা বলেন, সরকার তাদের সহিংসতা চালানোর পুরনো খেলায় লিপ্ত হয়ে এসব ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করছে।
সরকারকে প্রতিহত করার উপযুক্ত সময়
ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের জনগণ জেগে উঠেছে বলে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার এটাই উপযুক্ত সময়।
এটি একটি নির্বাচিত শাসন ব্যবস্থা নয় এবং এতে জনগণের ম্যান্ডেটের অভাব রয়েছে।
এই শাসন নিপীড়ন ও অবিচারের স্টিমরোলার চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ১৫ বছরে বিএনপির ৬০০ নেতাকর্মী বলপূর্বক গুমের শিকার হয়েছেন এবং এক হাজারেরও বেশি নিহত হয়েছেন এবং অনেকে পঙ্গু ও নিপীড়িত হয়েছেন।
তিনি বলেন, মানুষ এখন ভয়ঙ্কর দানবীয় শাসন থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়। আমরা জানি একটি গণতান্ত্রিক শক্তির পক্ষে ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করা খুবই কঠিন।
কিন্তু এ ধরনের লড়াই করার জন্য আমাদের সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও কৌশল নিয়ে এগোতে হবে।
তিনি বলেন, গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত প্রায় ৪০ লাখ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী ‘মিথ্যা’ রাজনৈতিক মামলার মুখোমুখি হয়েছেন।
ফখরুল অভিযোগ করেন, সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে দেশ থেকে বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করেছে, ব্যাংকগুলোকে অবনমন এবং মেগা প্রকল্পে লুটপাট করছে।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকার বলছে শুধু জনগণকে বিভ্রান্ত করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য কোনো অর্থনৈতিক সংকট নেই।
ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পর প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে কাউন্টিকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য তিনি সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তারেক ও জুবাইদার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা: মির্জা ফখরুল