তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত ও বর্তমান মেয়র নায়ার কবির (নৌকা), বিএনপি মনোনীত জহিরুল হক খোকন (ধানের শীষ), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হক ভূঁইয়া (মোবাইল ফোন), বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি মনোনীত মো. নজরুল ইসলাম (হাতুড়ী), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মো. আবদুল মালেক (হাতপাখা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল কারীম (নারিকেল গাছ)।
আরও পড়ুন: ভোলা পৌরসভা নির্বাচন: দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে নারীসহ আহত ২০
এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই এলাকায় প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো পৌর এলাকা। পৌরসভার প্রতিটি এলাকাতেই শোভা পাচ্ছে প্রার্থীদের পোস্টার। চলছে প্রার্থীদের পক্ষে মাইকিং। এছাড়া প্রতিদিনই মিছিল ও মোটরসাইকেল র্যালি হচ্ছে।
ইতোমধ্যেই নির্বাচনী প্রচারণা আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীসহ কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামে পৌরসভা নির্বাচনে সংঘর্ষ, গুলিতে নিহত ১
প্রচার-প্রচারণায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মেয়র নায়ার কবির এগিয়ে থাকলেও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জহিরুল হক খোকন প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন অনেকটা নীরবে। অপরদিকে, মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুল হক ভূঁইয়া (মোবাইল ফোন)।
আরও পড়ুন:পৌরসভা নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ বিএনপির
আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থীর বিরোধীতা করে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় এরই মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুল হক ভূঁইয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া মাহমুদের পক্ষে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়ায় মাহমুদের সমর্থক জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের আরও ২০ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:সীতাকুণ্ড পৌরসভা নির্বাচনে ইভিএম মেশিন ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ
আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী নায়ার কবির পৌর এলাকার উত্তর পৈরতলার প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক পরিবারের পুত্রবধূ। তার স্বামী প্রয়াত অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবির জাতীয় পার্টির শাসনামলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসন থেকে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরশাদ সরকারের উপমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৌরসভার দুই বার নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
গত ৫ বছর মেয়র থাকাকালে পৌর এলাকায় চোখে পড়ার মতো কোন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করতে না পারলেও নায়ার কবিরের আমলে পৌরসভায় কোন টেন্ডারবাজি হয়নি। পৌর এলাকায় তিনি বঙ্গবন্ধু স্কয়ার স্থাপন করেছেন। দলীয় রাজনীতিতে কোনো ধরণের বলয় সৃষ্টি না করায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রশংসিত হয়েছেন।
আরও পড়ুন:প্রথম দফার পৌরসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জহিরুল হক খোকন পৌর এলাকার শিমরাইলকান্দির বাসিন্দা। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদের ভিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমরা একটু বেকায়দায় আছি। বিদ্রোহী প্রার্থীকে নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
তবে শেষ পর্যন্ত ভোটাররা উন্নয়নের কথা চিন্তা করে, এলাকার শান্তিশৃঙ্খলার কথা চিন্তা করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকেই বেছে নিবেন বলে বিশ্বাস তার।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আল-মামুন সরকার বলেন, ‘প্রত্যেক পৌরসভাতেই পাঁচ বছর পর পর বিদেশি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প আসে। বর্তমান মেয়রের আমলে বিদেশি প্রজেক্ট না আসায় হয়ত বড় ধরণের উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়নি। তবে একেবারে উন্নয়ন হয়নি সেটা বলা যাবে না। উন্নয়নের জন্য তিনি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। তিনি মেয়র থাকাকালে পৌর এলাকার মানুষ অনেক শান্তিতে ছিল। দলীয় কিংবা ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে তিনি কিছু করেছেন সেটা কেউ বলতে পারবে না। এবার নির্বাচিত হলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই তিনি আরও অনেক উন্নয়নের কাজ করতে পারবেন।’
পৌরসভার নির্বাচনে ১২টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে মোট ৭৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ওমর ফারুক জীবন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। মেয়র পদে ৬ জন ছাড়াও ১১টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৫৬ জন এবং ৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা এক লাখ ২০ হাজার ৫০৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ৫৯ হাজার ৬৬২ জন এবং মহিলা ভোটার ৬০ হাজার ৯৪২ জন।