ফরিদপুরে রাজেন বেপারি নামে এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যার দিকে সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের জুয়াইর গ্রামে নিজ ঘর থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।
রাজেন গত বছর আলহাজ আব্দুল খালেক ডিগ্রি কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে মৌসুমি ব্যবসা করতেন তিনি।
একমাত্র পুত্র রাজেনকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা সুফিয়া ও বাবা মান্নান মিয়া। তাদের আহাজারি থামছেই না।
আরও পড়ুন: নাটোরের গুরুদাসপুরে নিখোঁজ কৃষকের লাশ উদ্ধার
স্থানীয়রা জানান, গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজেন পাশ্ববর্তী বাখুন্ডা গ্রামের দিদার মিয়ার সুপারি গাছ থেকে এক থোকা সুপারি পাড়েন। ওই সময় যাচ্ছিলেন ওই এলাকার সরোয়ার মিয়া। সরোয়ার মিয়া সুপারি চুরির অপবাদ দিয়ে রাজেনকে মারধর করেন।
রাজেন বাড়িতে এসে কাউকে কিছুই বলেননি। কারো সঙ্গে কোনো কথাও বলেননি। ঘর থেকে বের হননি কয়েকদিন। এরপর শনিবার বিকালে মায়ের সঙ্গে ভাত খান রাজেন।
পরে চুরির অপবাদ সহ্য করতে না পেরে সন্ধ্যার দিকে নিজ ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন রাজন।
রাজেনের মা সুফিয়া আক্তার বলেন, ‘আমি কী নিয়ে বাঁচব। আমার মনি কত ভালো ছিল, তারে সুপারি চোর বানায়ে মারল ওরা। এটা সহ্য করতে পারেনি আমার মনি, তাই চলে গেল।’
রাজেনের বাবা মান্নান বেপারি বলেন, ‘আমার পোলাডারে মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করেছে সরোয়ার। আমার মনি এই অপবাদ সহ্য করতে না পেরে অনেক দূরে চলে গেল।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক মারছে আমার মনিরে। ভয়ে আমাদের কারো কাছেই একথা বলে নাই। নিজে নিজেই বুকের মধ্যে কষ্ট চেপে রেখে চলে গেল। আমরা কাকে নিয়ে বাঁচব।’
আরও পড়ুন: গাজীপুরে অটোচালক ও বয়াতির গলাকাটা লাশ উদ্ধার
রাজেনের চাচি সাবিনা বেগম বলেন, ‘যখন সরোয়ার মারতেছে, খবর পেয়ে আমি দ্রুত ওই খানে যাই। কিন্তু ওই খানে গিয়ে মনিরে আর পাই নাই। পরদিন সকালে আমারে বলে চাচি আমারে খুব মারছে সরোয়ার ভাই। আমার কানে মারছে আমি কানে কিছু শুনতে পাচ্ছি না। শরীরেও অনেক ব্যাথা। আমার মনি এই চুরির অপবাদ দিয়ে মারপিট সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে।
পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, রবিবার বিকাল (সাড়ে ৫টা পর্যন্ত) রাজেনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলে লাশেরর দাফন সম্পন্ন করা হবে।
ফরিদপুর কোতয়ালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল খায়ের শেখ জানান, রাতে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার বাখুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা সরোয়ার মিয়াকে এলাকায় গিয়ে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে মহানন্দা নদী থেকে অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার