পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে রানখরা গেলেও ফাইনালে ঠিকই জ্বলে উঠল বিরাট কোহলির ব্যাট। তার ব্যাটের হাসিতে শুরুতে উইকেট হারিয়েও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ালো ভারত, আর প্রোটিয়াদের দিল চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য।
বার্বাডোসের ব্রিজটাউনের কেনসিংটন ওভাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ১৭৬ রান করেছে ভারত।
এদিন দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেন কোহলি। ৫৯ বলে এই রান করতে গিয়ে তিনি দুটি ছক্কা ও ছয়টি চার মারেন। এছাড়া অক্ষর প্যাটেল ৩১ বলে ৪৭ এবং শেষের দিকে শিবম দুবে ১৬ বলে ২৭ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ দুটি উইকেট নেন কেশব মহারাজ। এছাড়া কাগিসো রাবাদা ও মার্কো ইয়ানসেনের ঝুলিতে গেছে একটি করে উইকেট।
প্রথম ওভারে তিনটি চার মেরে দলকে দারুণ শুরু এনে দেন বিরাট কোহলি। পরের ওভারে তা অব্যহত রাখেন রোহিতও। কিন্তু ওই ওভারেই জোড়া উইকেট শিকার করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে অসাধারণভাবে ম্যাচে ফেরান কেশব মহারাজ।
দ্বিতীয় ওভারের প্রথম দুই বলে দুটি চার মারেন রোহিত, কিন্তু চতুর্থ বলেই মহারাজের শর্ট লেঙ্থ ডেলিভারিটি সুইপ করতে গিয়ে ক্লাসেনের দারুণ এক ক্যাচের শিকার হয়ে ফিরতে হয় তাকে।
রোহিত সুইপ করলে বলটি প্রায় মাটি ছুঁয়েই যাচ্ছিল, কিন্তু মাটিতে পড়ার আগে বাঁ দিকে খানিকটা ঝাঁপিয়ে বলটি তালুবন্দি করেন শর্ট ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ অঞ্চলে ফিল্ডিং করা ক্লাসেন।
এরপর, ক্রিজে এসে পঞ্চম ডেলিভারিটি দেখেশুনে খেলে পরের বলেই মহারাজের ঘুর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে টপ এজ হয়ে যান ঋষভ পান্ত। উইকেটের পেছন থেকে ডি কক সহজ ক্যাচ নিলে খাতা খোলার আগেই ফিরতে হয় ভারতীয় উইকেটরক্ষককে।
এর ফলে ২৩ রানে দুই উইকেট হারায় ভারত। আর শুরুতেই দুই উইকেট হারিয়ে খানিকটা ব্যাকফুটে চলে যায় তারা। এসময় সূর্যকুমার যাদবকে নিয়ে উইকেটে থিতু হওয়ার চেষ্টা করেন কোহলি।
তৃতীয় ওভারে রাবাদার শেষ ডেলিভারিতে ফের একটি ক্যাচ উঠেছিল, তবে ফাঁকায় পড়ায় সে যাত্রায় বেঁচে যান কোহলি।
এদিন এক-দুই রান বাঁচাতে ফিল্ডিংয়ের মনোমুগ্ধকর পারফরম্যান্স দেখায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
আরও পড়ুন: ফাইনালে টস জিতে ব্যাটিংয়ে ভারত
এরপর দলীয় পঞ্চম ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে সূর্যকুমারকে ফেরান কাগিসো রাবাদা। ওভারের তৃতীয় ডেলিভারিতে সেই ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ অঞ্চল দিয়ে বলটি উড়িয়ে সীমানাছাড়া করার চেষ্টা করেন সূর্যকুমার। কিন্তু মারে জোর না থাকায় ক্লাসেনের হাতে ধরা পড়ে ফিরতে হয় তাকে।
তিনি ৪ বলে ৩ রান করে ফিরে গেলে ৩৪ রানের মাথায় তিন উইকেট হারিয়ে আরও চাপে পড়ে যায় ভারত। এরপর তুরুপের তাস হিসেবে বোলিং অলরাউন্ডার অক্ষর প্যাটেলকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে দেন রোহিত।
অক্ষর-কোহলি জুটি অক্ষত রেখে পাওয়ার প্লেতে তিন উইকেট হারিয়ে ৪৫ রান তোলে ভারত। এরপরই হাত খুলে খেলা শুরু করেন অক্ষর। নিয়মিত বিরতিতে চার-ছক্কা বের করতে থাকেন তিনি। এই দুই ব্যাটারের দৃঢ়তায় প্রথম দশ ওভারে ৭৫ রান সংগ্রহ করে ভারত। এরপর ১৩.১ ওভারে রাবাদাকে ছক্কা হাঁকিয়ে দলীয় শতরান পার করেন অক্ষর।
তবে এর দুই বল পরই দুঃখজনকভাবে রান আউট হয়ে ফিরতে হয় তাকে। ফেরার আগে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়ে ৩১ বলে ৪৭ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে যান তিনি। এই রান সংগ্রহ করতে তিনে মারেন চারটি ছক্কা ও একটি চারের মার।
আরও পড়ুন: ফাইনালের খুঁটিনাটি: আবহাওয়া, পিচ, দলের খবর
পরবর্তী ব্যাটার হিসেবে ক্রিজে এসে কোহলিকে তাল দিতে থাকেন শিবম দুবে। এর মাঝে ৪৮ বলে চলতি টুর্নামেন্টে নিজের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন বিরাট।
১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে ৫৯ বলে ৭৬ রান করে ফেরেন কোহলি। এরপর ইনিংসের দুই বল বাকি থাকতে ফিরে যান শিবমও (২৭), আর নর্টকিয়ার শেষ বলে দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে জাদেজাকে থামান মহারাজ। ফলে আট উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রানে থামে ভারতের ইনিংস।
প্রথমবার ফাইনালে উঠেই শিরোপা ছুঁতে হলে এই লক্ষ্য পাড়ি দিতে হবে প্রোটিয়া ব্যাটারদের।