হান্সি ফ্লিকের ছোঁয়ায় নতুন দিনের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে বার্সেলোনা সমর্থকরা। আর্থিক সংকটের কারণে চাহিদামতো খেলোয়াড় কিনতে না পারা এবং চোটজর্জর দল নিয়েও লিগের প্রথম চার ম্যাচে জয় পেয়েছে ক্লাবটি। তবে চতুর্থ ম্যাচে বিরাট জয়ে ভক্তেদের প্রত্যাশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে তার দল।

শনিবার (৩১ আগস্ট) বার্সেলোনার অলিম্পিক স্টেডিয়ামে রিয়াল ভায়াদোলিদের বিপক্ষে ৭-০ গোলের বিশাল জয় পেয়েছে কাতালুনিয়ার ক্লাবটি।

এই ম্যাচে ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক করেছেন বার্সার ব্রাজিল ফরোয়ার্ড রাফিনিয়া। এছাড়া শুরুতেই পিচিচির দৌড়ে থাকা রবের্ট লেভানডোভস্কি, দানি অলমো, ফেররান তোরেস ও জুল কুন্দে পেয়েছেন একটি করে গোলের দেখা। তবে গোল না পেলেও এদিন দুটি অ্যাসিস্ট করে নিজের প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন লামিন ইয়ামাল।

আরও পড়ুন: বার্সার দায়িত্ব নিয়ে শিরোপা জিততে বদ্ধপরিকর ফ্লিক

এদিন ম্যাচের ২০তম মিনিটে রাফিনিয়ার গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ৩-০ ব্যবধান গড়ে বিরতিতে যায় বার্সেলোনা। বিরতির পর তারা প্রতিপক্ষের জালে আরও চারবার বল পাঠায়।

ম্যাচের দশম মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত বার্সেলোনা, কিন্তু অফসাইডের কারণে দানি অলমোর গোলটি বাতিল হয়ে যায়।

বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া রাফিনিয়ার বুলেট শট প্রতিহত করলেও তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হন ভায়াদোলিদ গোলরক্ষক কার্ল হাইন। বল তার কাছ থেকে সামনে চলে আসলে এগিয়ে গিয়ে তা জালে জড়িয়ে দেন অলমো, কিন্তু ভিএআর রিভিউতে রেফারির অফসাইডের সিন্ধান্ত বহাল থাকলে হতাশ হয় বার্সার সমর্থকরা।

চতুর্দশ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে রবের্ট লেভানডোভস্কির শট ঠেকিয়ে দেন হাইন। ষোড়শ মিনিটে তার আরও একটি হেডার পোস্টের বাইরে বেরিয়ে যায়। তবে ২০তম মিনিটে রাফিনিয়ার চমৎকার এক গোলে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা।

মাঝ মাঠ থেকে রাফিনিয়ার দৌড় দেখেই শূন্যে ভাসিয়ে লং পাস দেন পাউ কুবারসি। এরপর প্রতিপেক্ষের বক্সের বেশ বাইরে থেকে বুক দিয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোনাকুনি এগিয়ে গিয়ে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ২৭ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড।

চার মিনিট পর প্রায় একইরকমভাবে লং পাস ধরে বার্সেলোনার ব্যবধান দ্বিগুণ করেন লেভানডোভস্কি। এবার তাকে অসাধারণ পাসটি দেন লামিন ইয়ামাল।

দ্বিতীয় গোল খাওয়ার দুই মিনিট পরই আক্রমণে উঠে দারুণ একটি গোলের সুযোগ তৈরি করে ভায়াদোলিদ। তবে শেষ মূহূর্তে পোস্টের বাইরে শট দিয়ে সুযোগটি নষ্ট করেন কিকে পেরেস। এ সময় থেকে কিছুটা আক্রমণাত্মক ও গতিশীল ফুটবল খেলা শুরু করে ভায়াদোলিদ।

৩৭তম মিনিটে আরও একটি সুযোগ তৈরি করে দলটি। তবে টের স্টেগেন শটটি ঠেকিয়ে দেওয়ার পর অফসাইডের পতাকা তোলেন লাইন্সম্যান।

এরপর ৩৯তম মিনিটে অলমোর জোরালো শট বুক দিয়ে ঠেকান হাইন। দুই মিনিট পর বক্সের ভেতর থেকে দুরের পোস্টে নেওয়া অলমোর আরেকটি শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে।

আরও পড়ুন: ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতে বার্সার ‘ফ্লিক অধ্যায়’ শুরু

প্রথমার্ধে যোগ করা সময়ে কর্নার কিক থেকে আসা ক্রস থেকে ব্যবধান আরও বাড়ান রাইট ব্যাক জুল কুন্দে। ফলে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বার্সেলোনা।

প্রথমার্ধে ৬৮ শতাংশ সময় বলের দখল রেখে মাঠে আধিপত্য বিস্তার করে বার্সেলোনা। এসময় মোট ৯টি শট নেয় তারা, যার ৬টি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে, ভায়াদোলিদ মাত্র দুটি শট নেয়, যার একটি শট লক্ষ্যে রাখতে পারে তারা।

দ্বিতীয়ার্ধে আরও ক্ষুরধার ফুটবল খেলা শুরু করে ফ্লিকের বার্সেলোনা। ৫৫তম মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় তারা, তবে রাফিনিয়ার নিচু ক্রস ধরে শট নিলেও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি লেভানডোভস্কি। পরের মিনিটে রাফিনিয়ার একটি অসাধারণ শট প্রতিহত করেন হাইন। ৫৮তম মিনিটে লেভার আরও একটি শট পোস্টে লাগে।

তবে ৬৪তম মিনিটে আক্রমণে উঠে জটলার মধ্যে থেকে চতুর্থ গোলটি করেন রাফিনিয়া। অলমোর বাড়ানো পাস ধরে বক্সে ঢুকে শট নেওয়ার আগে প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জে পড়ে যান লেভানডোভস্কি। তবে সেখান থেকে বল ধরে লামিন শট নিলে গোলরক্ষকের গায়ে লেগে সামনে চলে আসে, সঙ্গে সঙ্গে বাঁ দিক থেকে এগিয়ে গিয়ে বল গন্তব্যে পাঠিয়ে দেন রাফিনিয়া।

আরও পড়ুন: বিলবাওয়ের বিপক্ষে ঘাম ঝরানো জয় বার্সেলোনার

এরপর ৭১তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে গিয়ে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন এই ব্রাজিল ফরোয়ার্ড। সতীর্থের বল ধরে দ্রুতগতিতে এগিয়ে গিয়ে বক্সের সামনে থেকে রাফিনিয়ার দৌড় দেখে তাকে বক্সের মধ্যে পাস বাড়ান লামিন। বল ধরেই গোলরক্ষকের দুই পায়ের মাঝ দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক করেন বার্সার এই উইঙ্গার।

৮২তম মিনিটে গোল পেয়ে যান দানি অলমোও। বাঁ পাশ থেকে রাফিনিয়ার বাড়ানো দুরূহ পাস ধরে বক্সে ঢুকে প্রতিপক্ষের দুই ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে গোলরক্ষককেও হতভম্ব করে দেন তিনি। এর ফলে বার্সার জার্সিতে দুই ম্যাচে দুই গোলের দেখা পেলেন তিনি।

৭৩তম মিনিটে লেভানডোভস্কিকে উঠিয়ে ফেররান তোরেসকে মাঠে নামান ফ্লিক। ৮৫তম মিনিটে রাফিনিয়ার জোরালো ক্রসে পা ছুঁইয়ে সপ্তম গোলটি করেন বার্সার ৭ নম্বর জার্সিধারী এই ফুটবলার।

আরও পড়ুন: অভিষেক ম্যাচে গোল করে বার্সেলোনাকে জেতালেন অলমো

৮৯তম মিনিটে গোলমুখে লামিনের উদ্দেশে রাফিনিয়ার বাড়ানো জোরালো ক্রস থেকে আত্মঘাতী গোল খাওয়া থেকে বেঁচে যায় ভায়াদোলিদ। ডিফেন্ডার বলটি ক্লিয়ার করতে গেলে সামনের দিকে চলে যায়। তবে উপরে উঠে যাওয়ায় পোস্টের উপর দিয়ে বের হয়ে যায় বল। ফলে আরও লজ্জার হাত থেকে বেঁচে যায় সফরকারীরা।

যোগ করা সময়েও প্রতিপক্ষের ওপর চাপ ধরে রাখে বার্সেলোনা। তবে আর গোল না আসায় ৭-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে জিতে মাঠ ছাড়ে হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা।

এই জয়ে চলতি মৌসুমের প্রথম চার ম্যাচের চারটিতেই জয় পেয়েছে হান্সি ফ্লিকের দল। ফলে ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষস্থান মজবুত করে আন্তর্জাতিক বিরতিতে গেল কাতালুনিয়া জায়ান্টরা।

চতুর্থ রাউন্ডে দিনের অপর ম্যাচে আথলেতিক বিলবাউয়ের বিপক্ষে মাঠে নেমেছে ৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থানে থাকা আতলেতিকো মাদ্রিদ। এরপর রাত দেড়টায় ভালেন্সিয়ার মুখোমুখি হবে ৭ পয়েন্ট নিয়ে বার্সার পরেই অবস্থান করা ভিয়ারিয়াল। এছাড়া আগামীকাল রাত ৯টায় ওসাসুনার মাঠে খেলতে নামবে ৬ পয়েন্ট নিয়ে তিনে থাকা সেল্তা ভিগো। পরবর্তীতে রবিবার রাত দেড়টায় টেবিলের পঞ্চম অবস্থানে থেকে রিয়াল বেতিসকে আতিথ্য দেবে মৌসুমের শুরুতেই ভুগতে থাকা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ।