হান্সি ফ্লিকের তত্ত্বাবধায়নে উড়তে থাকা বার্সোনার প্রতাপ দেখল এবার আলাভেস। রবের্ট লেভানডোভস্কির হ্যাটট্রিকে ক্লাবটিকে উড়ে দিয়েছে বার্সা।

লা লিগায় রবিবার আলাভেসকে তাদের মাঠেই ৩-০ ব্যবধানে হারিয়েছে বার্সেলোনা। দলের হয়ে প্রথম ৩২ মিনিটের মধ্যে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন লেভানডোভস্কি।

এর ফলে চলতি মৌসুমে লিগে ৯ ম্যাচে ১০ গোল ও ২ অ্যাসিস্টসহ মোট ১২ গোলে অবদান রাখলেন তিনি। এছাড়া পিচিচির দৌড়ে নিজেকে আরও উপরে তুললেন ৩৬ বছর বয়সী এই পোলিশ স্ট্রাইকার।

দুই অর্ধে অবশ্য দুটি গোল পেয়েছিল আলাভেস, তবে অফসাইডের কারণে দুবারই হতাশ হতে হয় তাদের। অবশ্য বার্সেলোনার একটি গোলও অফসাউডে কাটা পড়ে।

এদিন বল দখলের লড়াইয়ে পরিষ্কার এগিয়ে ছিল বার্সেলোনা। ৭২ শতাংশ সময় নিজেদের দখলে বল রেখে মোট ১৫টি শট নেয় তারা যার ৯টিই ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে, প্রথমার্ধে একবারও লক্ষ্যে রাখতে না পারা আলাভেসের ১১টি শটের মধ্যে লক্ষ্যে ছিল মাত্র দুটি।

আরও পড়ুন: বার্সেলোনাকে খুশি করে সমতায় শেষ মাদ্রিদ ডার্বি

প্রতিপক্ষের মাঠে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণে উঠতে থাকে বার্সেলোনা। এরই ধারাবাহিকতায় রাফিনিয়ার গোলে চতুর্থ মিনিটেই এগিয়ে যায় কাতালানরা। তবে মাঝমাঠ থেকে লং পাস ধরে রাফিনিয়াকে বাড়ানোর আগে অফসাইডে ছিলেন লামিন ইয়ামাল। ফলে গোলটি বাতিল হয়ে যায়।

তবে এর দুই মিনিট পর পায়ের পেশিতে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় বার্সা উইঙ্গার ফেররান তোরসকে। তার বদলি হিসেবে এরিক গার্সিয়াকে মাঠে নামান হান্সি ফ্লিক।

এরপর সপ্তম মিনিটে কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায় বার্সা। ডান পাশে প্রতিপক্ষের বক্সের অনেকটা বাইরে ফ্রি কিক আদায় করেন লামিন, তা থেকে গোলমুখে দারুণ একটি ক্রস দেন রাফিনিয়া। এরপর লাফিয়ে উঠে চমৎকার হেডারে ঠিকানা খুঁজে নেন রবের্ট লেভানডোভস্কি।

ম্যাচের ২২তম মিনিটে দ্বিতীয় গোল করে ব্যবধান বাড়ান লেভানডোভস্কি। বাঁ পাশ দিয়ে বক্সে ঢুকেই পেনাল্টি স্পটের সামনে থ্রু বল বাড়ান রাফিনিয়া, এরপর এগিয়ে গিয়ে গোলরক্ষককে বোকা বানান লেভানডোভস্কি।

দুই মিনিট পর ব্যবধান আরও বাড়াতে পারতেন রাফিনিয়া। তবে বাঁ পাশ থেকে কাছের পোস্টে তিনি নিচু শট নিলে গোলরক্ষক তা ঠেকিয়ে দেন।

৩২তম মিনিটে দুর্দান্ত এক গোলে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন লেভানডোভস্কি। লেভাকে বক্সে ঢুকতে দেখে রক্ষণচেরা অসাধারণ একটি পাস দেন এরিক গার্সিয়া, তা ধরে কিছুটা ডান দিকে সরে গিয়ে পড়ে যাওয়ার মুখে দূরের পোস্টের দিকে আচমকা বল ঠেলে দেন লেভানডোভস্কি। গোলরক্ষক বিষয়টি একেবারেই আঁচ করতে না পেরে কাছের পোস্টের দিকে এগিয়ে এসেছিলেন। ফলে শটে গতি না থাকলেও বলের গড়িয়ে গড়িয়ে জালে জড়িয়ে যাওয়া দেখতে হয় তাকে।

এর ফলে প্রথম গোল করার ২৫ মিনিটের মধ্যে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন ৩৬ বছর বয়সী এই পোলিশ।

৩৯তম মিনিটে ড্রিবল করে এগিয়ে গিয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে শট নেন পেদ্রি, তবে সহজেই তা লুফে নেন আলাভেস গোলরক্ষক আন্তনিও সিভেরা।

দুই মিনিট পর চতুর্থ গোল পেতে পারতেন লেভানডোভস্কি, তবে সতীর্থের বাড়ানো পাসে গতি বেশি থাকায় এগিয়ে এসে বলের নিয়ন্ত্রণ নেন সিভেরা।

প্রথমার্ধের এক মিনিট বাকি থাকতে আক্রমণে ওঠে আলাভেস। এরপর দুই কর্নারের পর ৪৫তম মিনিটে একটি গোল পেয়ে যায় স্বাগতিকরা, কিন্তু অফসাইডে গোলটি বাতিল হয়ে যায়। ফলে হতাশ হয়ে ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় আলাভেস।

দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দেয় আলাভেস। এর মধ্যে ৫১তম মিনিটে তাদের একটি শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে।

প্রথমার্ধের মতো রক্ষণাত্মক ফুটবল না খেলে সুযোগ পেলেই আক্রমণে উঠতে থাকে তারা। ফলে আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে জমে ওঠে দ্বিতীয়ার্ধের খেলা।

এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ সময় পর ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করে বার্সেলোনা। ৭০তম মিনিট থেকে ফের আলাভেসকে চেপে ধরে তারা।

৭১ ও ৭৬তম মিনিটে দুটি শট নেন লামিনের বদলি নামা আনসু ফাতি। তার প্রথম শটটি গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে প্রতিহত করেন এবং পরেরটি পোস্টে লেগে ফিরে আসে।

৭৮তম মিনিটে আলাভেসের আরও একটি আক্রমণ প্রতিহত করেন বার্সেলোনা গোলরক্ষক ইনিয়াকি পেনিয়া।

৮৫তম মিনিটে ফের গোল আদায় করে আলাভেস, কিন্তু এবারও অফসাইডের কারণে গোলটি বাতিল হয়।

পরের সময়টুকু দুই পাশেই আক্রমণ দেখা যায়। তবে ফিনিশিংয়ের অভাবে দুদলের বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা বৃথা গেলে ৩-০ ব্যবধান ধরে রেখেই ম্যাচ শেষ করে বার্সেলোনা।

আরও পড়ুন: উড়তে থাকা বার্সেলোনাকে মাটিতে নামাল ওসাসুনা

এই জয়ে নবম রাউন্ডের খেলা শেষে ৮ ম্যাচ জিতে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষস্থান ধরে রেখেই আন্তর্জাতিক বিরতিতে গেল ফ্লিকের শিষ্যরা। সমান সংখ্যক ম্যাচে ৬টি জয় ও তিনটি ড্রয়ে ২১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রিয়াল মাদ্রিদ; আর ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তিনে রয়েছে ভিয়ারিয়াল। এক ম্যাচ কম খেলা আতলেতিকো মাদ্রিদের পয়েন্ট ১৬। ফলে নবম রাউন্ডের ম্যাচটি জিতে তিনে ওঠার সুযোগ রয়েছে দিয়েগো সিমিওনের দলের।

আন্তর্জাতিক বিরতির পর আগামী ২০ অক্টোবর সেভিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামবে বার্সেলোনা। তার তিন দিন পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বায়ার্ন মিউনিখের মুখোমুখি হবে কাতালানরা।