প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি এখন নির্বিঘ্নে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারলেও, অগ্নিসংযোগ করে যারা জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছে তাদের গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাই বিএনপি এখন নির্বিঘ্নে সভা-সমাবেশ, মিছিলসহ সব কর্মসূচি আয়োজন করতে পারে। তবে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগ ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। কারণ, তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে এবং মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছে।’
শুক্রবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্বকালে এসব কথা বলেন।
২০১৩-২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসংযোগ সহিংসতার উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছে; ট্রেন, বাস, লঞ্চ এমনকি সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ সর্বত্র অগ্নিসংযোগ করেছে।
তিনি বলেন, অপরাধীরা আত্মগোপন করেছে, কিন্তু বিএনপি রাজপথে আন্দোলন করছে বলে তারা এখন বেরিয়ে আসবে।
আরও পড়ুন: দাম নিয়ন্ত্রণে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা জনগণকে নির্যাতন করেছে। তাদের জন্য কোন জায়গা থাকবে না। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আইন সবার জন্য সমান।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের রাজনীতির কোনো স্থান থাকবে না। ‘আমরা এর অনুমতি দেব না।’
শেখ হাসিনা বলেন, তার দল জনগণের জন্য কাজ করে, তাদের মন জয় করে ক্ষমতায় এসেছে এবং এখনও জনগণের আস্থা রাখতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের ভোট ও আস্থা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছি। আমরা গত ১৪ বছর ধরে এই দেশের জনগণের আস্থা ধরে রেখেছি। বরং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।’
এই অর্জন ধরে রেখে তার দলের নেতাকর্মীদের তিনি সামনে এগিয়ে যেতে বলেন।
তিনি বলেন, যারা সন্ত্রাসী, খুনি, ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার অপরাধী, গ্রেনেড হামলাকারী এবং যারা ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালিয়েছে তাদের জনগণ বিশ্বাস করে না।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ কখনই তাদের পাশে দাঁড়াবে না এবং তাদের ভোটও দেবে না।’
পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের বৈদেশিক রিজার্ভের অর্থে গঠিত বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিলের নিজস্ব অর্থে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জে টাকা দেয়া হয়েছে এবং ২ শতাংশ সুদে টাকা ফেরত দেয়া হবে। সুতরাং, এটি রিজার্ভকে প্রভাবিত করবে না বরং এটি থেকে লাভও হবে।
আরও পড়ুন: রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি বসছে বুধবার, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
জ্বালানি সংকট সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কীভাবে ঘাটতি মেটাতে জ্বালানি আমদানি করা যায় সে বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে।
খাদ্য আমদানিকারকদের সঙ্গে সম্প্রতি এক বৈঠকে তিনি ব্যবসায়ীদের স্পষ্টভাবে বলেন, সরকার যদি আন্তর্জাতিক দামে জ্বালানি কিনতে প্রস্তুত হয়, তবে তা আমদানি করতে পারে।
তিনি তাদের বলেন, এখানে অতিরিক্ত ভর্তুকি দেয়ার ক্ষমতা সরকারের নেই ।কারণ খাদ্য ক্রয়ের জন্য ভর্তুকি হিসাবে ৪৬ হাজার কোটি টাকা দিতে হবে। এখন কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি দেয়ার জন্য প্রায় ৮৬ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। সরকার দেশে সৌরশক্তি বাড়ানোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আ.লীগ নেতাকর্মীদের তার সরকারের সাফল্য ও অর্জন, উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং বিএনপি সরকারের দুঃশাসন জনগণের সামনে তুলে ধরতে বলেছেন।
সংকটের মধ্যে আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল সহজভাবে অনুষ্ঠিত হবে:
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগই সম্ভবত একমাত্র দল যারা তার সনদ অনুসরণ করে নিয়মিত কাউন্সিল আয়োজনের পাশাপাশি জনগণের জন্য কাজ করে।
তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে এবং শুক্রবারের সভায় কাউন্সিল বাস্তবায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে।
আ.লীগ সভাপতি বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে কঠোর পরিশ্রমের অংশ হিসেবে স্বল্প বাজেটে এ বছর কাউন্সিল হবে সহজ পদ্ধতিতে।