খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, চালের দাম বাড়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এছাড়া সততা আর নিষ্ঠার সঙ্গে যাঁরা ব্যবসা করেন তাঁরা অবশ্যই স্ব স্ব ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করবেন।
তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে প্রকৃত ব্যবসা না করে ভিন্ন খাতে অর্থাৎ বাড়ি গাড়ি বানিয়ে ফেলেন, তাঁরা পরবর্তীতে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে ঋণ খেলাপি হয়ে যান। আসলে তাদের ইচ্ছাই অসৎ। ঋণ পরিশোধের ইচ্ছাই তাদের থাকে না। যারা লেগে থাকে, লেগে আছে তারা অবশ্যই সফলতা অর্জন করে।
শনিবার দুপুরে নওগাঁ কনভেনশন সেন্টার মিলনায়তনে নওগাঁ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ আয়োজিত সংগঠনের মেম্বার্স ডে' ২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন খাদ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার সব দিক বিবেচনায় একটি সফল সরকার।
করোনা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, অনেকে বলেছিলেন বাংলাদেশে বহু মানুষ মারা যাবে। না খেতে পেয়েও অনেক মানুষ মারা যাবে। কিন্তু সরকার অত্যন্ত সফলতার মাধ্যমে সে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী বিশ্বে দারুণভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: চকচকে চাল বর্জন করে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন চাল খাওয়ার আহ্বান খাদ্যমন্ত্রীর
তিনি আরও বলেছেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে এ জেলায় একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন লাভ করেছে। আশা করি জাতীয় সংসদের আসন্ন শীত মওসুমের অধিবেশনে সংসদীয় অনুমোদন লাভ করবে। এছাড়া জেলায় একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের একাডেমিক অনুমোদন পেয়েছে।
কৃষকদের আরও সহজভাবে সার সরবরাহ করতে ইতোমধ্যে একটি বাফার গো-ডাউন নির্মাণ এবং একটি হিমাগার নির্মাণের জন্য অনুমোদন লাভ করেছে।
খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন, দেশের অনেক জেলার থেকে নওগাঁ জেলায় রাস্তাঘাটের অনেক বেশী উন্নয়ন হয়েছে। এছাড়া কৃষকরা ফসল উৎপাদনে আগ্রহী না হলে মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ হবে না। তাই সরকার কৃষকদের ফসল উৎপাদনে অধিক আগ্রহী করে তুলতে কৃষকদের সহায়তায় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এর আগে বেলা ১২টায় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার হাট নওগাঁ এলাকায় অবস্থিত নওগাঁ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ভবনে মুজিব কর্নার ও ডিরেক্টরস লাউঞ্জের উদ্বোধন করেন।
এ সময় খাদ্যমন্ত্রী বলেন, মিলগেট থেকে শুরু করে কোথাও চালের দাম বাড়েনি। একটা মৌসুম শেষ আরেকটা মৌসুম শুরু হলে এই দুই মৌসুমের মাঝখানে চালের দাম একটু ওঠানামা হয়। ইতোমধ্যে আমন মৌসুম ধান কাটা-মাড়াই শুরু হচ্ছে। এছাড়াও ওএমএস চলমান রয়েছে। তাই চালের দাম বাড়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সরকারি গুদামে যে খাদ্য মজুত থাকার কথা, তার দ্বিগুণ আছে। প্রায় ১৮ লাখ টন চাল সরকারি গুদামে মজুদ আছে। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারিভাবে আমদানি করা হচ্ছে। এরসঙ্গে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই যোগ হবে নতুন আমনের ফলন। সব মিলিয়ে দেশে খাদ্য সংকটের কোন শঙ্কা নেই।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, সরকার প্রান্তিক কৃষকদের নায্যামূল্য দিতেই ধান কিনে। সরকারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলো কি হলো না সেটা কোন বড় কথা নয়। আমরা চাই কৃষকেরা ধানের নায্য মূল্য পাচ্ছেন।
মন্ত্রী বলেন, চকচকে চাল না খেয়ে সবাইকে নন-পলিশ চাল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। আগের মত মানুষ যদি নন-পালিশ চাল খাওয়া শিখে তাহলে আমাদের দেশে ১৮ থেকে ২০ লাখ টন চাল সেফ হবে। তখন আমদানি করার প্রয়োজন হবে না।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, নওগাঁ জেলা কৃষি ভিত্তিক জেলা। কৃষি ক্ষেত্রে এ জেলার রয়েছে অনেক সফলতা। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে সরকার অনেক কল্যাণমুলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। কেবলমাত্র কৃষকদের সার প্রদানের ক্ষেত্রেই ৪৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করছে।
এছাড়া খাদ্য নিয়ে অযথা কেউ যাতে গুজব ছড়াতে না পারে সে দিকে ব্যবসায়ীসহ সকলকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রী।
নওগাঁ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সভাপতি ও এফবিসিসিআই পরিচালক ইকবাল শাহরিয়ার রাসেলের সভাপতিত্বে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছি) আসনের সংসদ সদস্য মো. ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম, এফবিসিসিআই-এর সহ-সভাপতি আমিন হেলালী, এফবিসিসিআই-এর পরিচালক মোসাদ্দেক হোসেন খান ও এফবিসিসিআই-এর পরিচালক যশোধা জীবন দেবনাথ, নওগাঁ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান টুনু প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নওগাঁ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী দ্বীন, বেলকন গ্রুপের এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. বেলাল হোসেন এবং পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল মোস্তফা কালিমি বাবু।
আরও পড়ুন: লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে: খাদ্যমন্ত্রী
খাদ্যশস্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি না করার আহ্বান খাদ্যমন্ত্রীর