প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বলেছেন, করোনাভাইরাস এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সঙ্কটের মধ্যে সরকার জনগণের অর্থ সাশ্রয়ের জন্য কিছু কঠোরতামূলক ব্যবস্থা আরোপ করলেও, শিশুদের জন্য বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপার বিষয়ে কোনো আপস করেনি সরকার।
তিনি বলেন, ‘...আমরা শিশুদের বিষয়গুলো ভুলে যাইনি, আমরা তাদের পাঠ্যবই ছাপানোর ক্ষেত্রে আপস করিনি। হ্যাঁ, আমরা অন্যান্য খাত থেকে অর্থ সঞ্চয় করার চেষ্টা করছি (মিতব্যয়ী ব্যবস্থা আরোপ করার মাধ্যমে), তবে আমরা তাদের (শিশুদের) বই ছাপানোর দিকে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে ২০২৩ সালের বিনামূল্যে পাঠ্যবউ বিতরণ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সবকিছুর দাম বেড়েছে, যার কারণে সরকার সরকারি ব্যয়ে কিছু কঠোরতামূলক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে। তবে এতে বছরের প্রথম দিনেই শিশুদের জন্য পাঠ্যবই মুদ্রণ ও বিতরণে কোনো প্রভাব ফেলেনি।
তিনি উল্লেখ করেন, সরকার করোনাভাইরাস, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং সব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ সব বাধা উপেক্ষা করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে শিশুদের সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে, কারণ তারাই লক্ষ্য অর্জনের চালিকাশক্তি।
আরও পড়ুন: আগামী বছরে পরিক্ষামূলকভাবে কয়েকটি শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী বই আসছে
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের বাচ্চাদের এমনভাবে বড় করব যাতে তারা আগামী দিনে প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে এবং যা তাদের আসন্ন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করার জন্য প্রস্তুত করতে পারে।’
তিনি শিশুদের কৌতূহলকে উদ্দীপিত করে তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে বিশেষ মনোযোগ দেয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘সেদিকে দৃষ্টি রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য তাদেরকে (শিশুদের) দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সঠিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে কারিগরি ও প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পূর্ণ জনসংখ্যা প্রযুক্তিগতভাবে স্মার্ট হবে, তারা পিছিয়ে থাকবে না।’
তিনি বলেন, দেশের শিশুদের আন্তরিকতার সঙ্গে গড়ে তুলতে পারলে বিশ্বের কোনো শক্তি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি ঠেকাতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় থেকে এখন পর্যন্ত সরকার টেলিভিশনের মাধ্যমে ‘আমার স্কুল আমার ঘরে’ উদ্যোগ নেয়ায় শিশুরা ঘরে বসেই পড়াশোনা করছে।
তিনি বলেন, ‘সংসদ টিভির মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে একাডেমিক অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়েছে। এগুলো বিটিভির মাধ্যমেও পরিচালিত হয়েছে। আমি মনে করি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সবসময় সংসদ টিভি ব্যবহার করতে পারে।’
তিনি আরও প্রকাশ করেছেন যে শিক্ষার জন্য সরকারের একটি পৃথক টেরেস্ট্রিয়াল টিভি চ্যানেল চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের পর যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা এদেশের মানুষকে নিরক্ষরতামুক্ত করার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে আবার শিক্ষা কমিশন গঠন করে।
আরও পড়ুন: পাঠ্যবই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর
তিনি আরও বলেছেন, তারা সাক্ষরতার হার বাড়ানোর জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করেছে এবং বয়স্ক লোকদের সাক্ষরতার বিষয়টিও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শিক্ষা মানুষকে দারিদ্রমুক্ত রাখার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। ‘সুতরাং, সমগ্র জাতিকে শিক্ষিত করার জন্য আমরা নতুন পদক্ষেপ নিয়েছি এবং আমরা একটি নতুন শিক্ষা কমিশন গঠন করেছি।’
তিনি আরও বলেন, কিন্তু ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় আওয়ামী লীগ সরকার এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর তারা দেশকে আবার অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে এবং এটাই বাস্তবতা।
তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে মানুষ নৌকায় ভোট দিয়েছিল, আমরা আবার সরকার গঠন করেছি। তারপর থেকে আমরা আবার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি কিভাবে আমরা এই দেশের মানুষকে নিরক্ষরতা থেকে মুক্ত করব এবং ২০১০ সাল থেকে আমরা বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ শুরু করেছি।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।
আরও পড়ুন: বৈশ্বিক বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিংয়ে স্থান পেয়েছে যেসব বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়