জীবনেও ভাবি নাই, পাক্কা ঘরে থাকবার পামু। আর আইজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘরও পাইলাম, তার সাথে কথাও কইলাম। এই আনন্দ কয়ে বোঝানো যাইবো না।
জমিসহ নতুন ঘর পাওয়ার পর ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলতে পেরে এভাবেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন শেরপুরের তাসলিমা খাতুন (৩০)।
রবিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে দ্বিতীয় পর্যায়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই অনুষ্ঠানে শেরপুরে সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার হলদিগ্রাম গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প এলাকার সাথে সরাসরি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রী উপকারভোগীদের সাথে কথা বলতে চাইলে তার সাথে কথা বলেন তাসলিমা খাতুন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘আমি স্বামী পরিত্যক্তা। আমার কোন ঘর-বাড়ি আছিল না। বাপের বাড়িতেই আছিলাম। এহন আমারে আপনি একটা ঘর উপহার দিছেন। সেই ঘর পাইয়া অনেক ধন্য হইছি। জমি দিছেন। ঘরে বিদ্যুৎ পাইছি। আরও অনেক সুবিধা পাইছি। তার জন্য অনেক খুশি’।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেলো শেরপুরে ১৬৭ গৃহহীন পরিবার
তাসলিমা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এরকম ঘরে থাকতে পারমু কহনো ভাবতে পারি নাই। মাথার ওপর ছাদ ছিলো না। এখন নিজের জমি হইছে, নিজের ঘরে শান্তিতে থাকতে পারমু। আল্লার কাছে দোয়া করি, যেন আল্লায় আপনারে ভালো করে’। এ সময় তাছলিমা প্রধানমন্ত্রীকে হলদিগ্রাম গুচ্ছগ্রামে বেড়াতে আসার আমন্ত্রণ জানান।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে গৃহহীনের অভাব ঘুচবে ১৫৭২ পরিবারের
জমি সহ ঘর পেয়ে দারুণ উচ্ছসিত হলদিগ্রাম গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা। উচ্ছাস যেন কমছে না ষাটোর্ধ্ব দিনমজুর লাল মিয়া ও তার স্ত্রী রেজিয়া খাতুনের। লাল মিয়া জানান, জন্মের কয়েক বছর পরেই বাবা-মা হারান। অন্যের বাড়িতে থেকে বড় হয়েছেন। বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন দীর্ঘ দিন। পরে শ্যালকের (বউয়ের ছোট ভাই) অত্যাচারে সেই বাড়ি ছেড়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে পাখির মতো ঘুরে বেড়িয়েছেন। বুড়ো বয়সে এসে নিজের নামে তিনিই কিনা পেলেন জমির দলিল ও ঘরের কাগজ। শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার শালচূড়া গ্রামের বাসিন্দা লাল মিয়া ও তার স্ত্রী রেজিয়া খাতুন নতুন পাওয়া ঘর ঘুরে ঘুরে দেখিয়ে জানালেন, আধা পাকা ঘরটি তাদের খুব পছন্দ হয়েছে। থাকার কক্ষের সঙ্গে রান্নাঘর। টয়লেটের ব্যবস্থাও ভালো। বিদ্যুৎ আছে। পানি আছে। পরিবার নিয়ে এখন খুব ভালোভাবে থাকতে পারবেন।
আরও পড়ুন: মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার গৃহহীনদের জন্য ঘর
ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের হলদীগ্রাম আশ্রয়কেন্দ্রে ২৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর দেওয়া হয়েছে। রবিবার প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক এমপি উপকারভোগীদের হাতে জমির দলিল ও ঘরের চাবি তুলে দেন। পরে হলদীগ্রাম আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে প্রকল্প সম্পর্কে অবহিত করেন ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ। এসময় উপস্থিত ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মো. শফিকুর রেজা বিশ্বাস, ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশিদ, জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব, পুলিশ সুপার মো. হাসান নাহিদ চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক এটিএম জিয়াউল ইসলাম, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট চন্দন কুমার পাল পিপি, ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাইম, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুধীবৃন্দ।
হলদীগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পটি ৩ একর ১৩ শতক আয়তনের এ জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ১৫টি পরিবার আছে। নতুন করে যুক্ত হলো আরও ২৫টি পরিবার। আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ঘর প্রদান উপলক্ষে সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। নতুন নির্মিত ঘরগুলোর উদ্বোধন উপলক্ষে ঘরের দরজার সামনে লাগানো হয়েছে নামফলক। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপকারভোগীদের দেওয়া হয়েছে নতুন জামা-কাপড়। সবমিলিয়ে নিজের নামে জমির দলিল ও জমির ওপর সেমি পাকা ঘর পেয়ে ঘরে ঘরে বইছে আনন্দের বন্যা।
জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বলেন, ‘মুজিববর্ষে ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে শেরপুর জেলায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৬৭টি গৃহহীন পরিবারকে জমি সহ ঘর দেওয়া হয়েছে। তন্মধ্যে সদর উপজেলায় ৩০টি, নকলায় ৪২টি, নালিতাবাড়ীতে ৫০টি, শ্রীবরদীতে ২০টি ও ঝিনাইগাতীতে ২৫টি ঘর রয়েছে। এগুলো প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, রিকশাচালক, দিনমজুর, বিধবা, কাজের মহিলাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। ঘর নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা।