বর্ষা আসার সাথে সাথে ঢাকাবাসী প্রতিবছরই জলাবদ্ধতার সমস্যায় পড়ে। মেগা সিটির দীর্ঘদিনের এই সমস্যা সমাধানের জন্য এখনও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরের রাস্তা থেকে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে একটি সমন্বিত মহাপরিকল্পনা নেয়া উচিত ছিল।
দুই সিটি করপোরেশনের দাবি, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন, বক্স কালভার্ট নির্মাণ ও খাল ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান থাকায় এ বছর জলাবদ্ধতা কম হবে।
ইউএনবির সাথে আলাপকালে কয়েকজন নগরবাসী আসন্ন বর্ষায় জলাবদ্ধতার সমস্যা নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
মগবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. রহিমুল্লাহ বলেন, ‘নগরীর বিভিন্ন সেবা সংস্থার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এই রাস্তায় চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়বে কারণ বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টি হলেই এগুলো জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে।’
মালিবাগ এলাকার গৃহবধূ মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া-আসা করতে তেজগাঁও যেতে হবে। সেখানে একটি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে এবং নির্মাণ কাজের কারণে পুরো এলাকাটি দুর্গম হয়ে পড়েছে।’
জলাবদ্ধতার কারণে আসন্ন বর্ষায় সেখানে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনর পদক্ষেপ
এবারের বর্ষায় রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৪৬টি হটস্পট চিহ্নিত করেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১০৪ ও উত্তরের ৪২টি। এসব স্থানে বিগত বছরগুলোয় বৃষ্টির পানি জমেছিল। তার আলোকেই চিহ্নিত করা হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) জানায়, জলাবদ্ধপ্রবণ ১০৪টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৯টির বেশি স্থানের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে কিছু অংশের কাজ চলছে। এছাড়া জলজট নিরসনে ড্রেন, বক্স কালভার্ট ও খাল পরিষ্কারের কার্যক্রম চলছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির অতিরিক্ত জলাবদ্ধতাপ্রবণ ৩২টির বেশি এলাকা মতো। পল্টন, শান্তিনগর, বেইলি রোড, কাকরাইল,গোপীবাগ, কমলাপুর, টিকাতলী, আগাসাদেক রোড, আগামাসি লেন, আব্দুল হাদি লেন, ইস্কাটন রোড, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকা, বাংলাদেশ সচিবালয়, ইস্কাটন রোড, নিউমার্কেট, বাটা মোড়, ধানমন্ডি ঈদগাহ রোড, ঝিগাতলা, নাজিম উদ্দিন রোড, নবাবগঞ্জ পার্ক, আজিমপুর, কে এম দাস লেন সংলগ্ন রাস্তা, আরকে মিশন রোড ও অভয়দাস লেন গোপীবাগ বাজার রোড ও পুরান ঢাকার কিছু এলাকা।
অপরদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্রে জানা যায়, গত বছর জলাবদ্ধপ্রবণ ১০৩টি স্থান ছিল। এবার এসব স্থানের মধ্যে ৬১টির সংস্কার করা হয়েছে। বাকি ৪২টি স্থান সংস্কারের কার্যক্রম চলছে। এছাড়া ড্রেন ও খালের পরিষ্কারের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা উত্তরের অতিরিক্ত জলাবদ্ধ এলাকা প্রায় ৩০টির মতো- মিরপুর-১০, মিরপুর-১৩, মিরপুর সাংবাদিক কলোনি এলাকা, মিরপুর কালশী, বিমানবন্দর সড়কের আর্মি স্টেডিয়াম থেকে বনানী পর্যন্ত, শহীদ আব্দুর ওয়াব রোড, মিরপুর শেওরা পাড়া, কাজী পাড়া, মনিপুর, মধুবাগ, বাংলামোটর, মালিবাগ, মোহাম্মদপুর লালমাটিয়, কারওয়ান বাজার টিসিবি ভবন সংলগ্ন এফডিসি এলাকা পর্যন্ত, নাখালপাড়া, নিকুঞ্জ-১, ২, গ্রীন রোড, তে বসুন্ধরা সিটির পিছনে তেজতুরি বাজার, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, কুড়িল, বাড্ডা ও কুড়িল নতুন বাজার এলাকা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ (অতিরিক্ত সচিব) ইউএনবিকে বলেন, গত বছর দক্ষিণ সিটিতে ১০৪টি স্পটে পানি জমাট থাকতো। এই জায়গা গুলো চিহ্নিত করে এবার সংস্কার কাজ করেছি। ১০৪টির মধ্য ৫টি স্পট বাকি আছে। এই স্পট ১৯ মের মধ্যে শেষ হবে। এছাড়া ১৫ কিলোমিটার খাল পরিষ্কার করেছি। আমরা আশা করছি এবার বর্ষায় গতবারের তুলনায় সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।