অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই রাজস্ব আদায় জোরদার এবং দেশের আর্থিক খাতকে আরও সুসংহত করতে হবে।’
এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, একটি শক্তিশালী, কার্যকর ও স্বচ্ছ আয়কর বিভাগ স্থাপন করা ছাড়া সরকারের আর কোনো উপায় নেই।
অনলাইন ট্যাক্স, ট্যাক্স রিটার্ন জমা:
সরকার ইতোমধ্যে ডিজিটাল ট্যাক্স প্রদানের পাশাপাশি অনলাইন ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের সুবিধার্থে কর বিভাগের বাংলাদেশ ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্স বা বিআইটিএক্স সিস্টেমকে আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে।
অনলাইনে কর পরিশোধ এবং অনলাইন ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের বিষয়টি জনপ্রিয় করার জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রথমবারের মতো অনলাইনে যারা আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন এমন সব করদাতার জন্য ২ হাজার টাকা কর ছাড়ের ব্যবস্থা চালু করেছেন।
বাজেট প্রস্তাব পেশকালে অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি আশা করি এটি করদাতাদের অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার জন্য উৎসাহিত করবে, যা আয়কর বিভাগের ডিজিটাল রূপান্তর প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করবে।’
সরকারি ডেটাবেজে অ্যাক্সেস পেতে যাচ্ছে কর বিভাগ:
বাজেটের নথি অনুসারে, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি সংস্থার ডেটাবেজে কর বিভাগকে অ্যাক্সেস দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘ভার্চুয়াল অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক কর এবং অডিটিং সম্পর্কিত বিষয়গুলোর সাথে বিশেষ অগ্রাধিকার যুক্ত হবে।’
কর একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা:
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, চলমান জরিপ কার্যক্রমকে আরও নিবিড় ও প্রযুক্তিবান্ধব করার মাধ্যমে করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার।
তিনি বলেন, পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে দেশে একটি ট্যাক্স একাডেমি প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে।
আধুনিক আয়কর আইন প্রণয়নের কাজও চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনগণকে কর সম্পর্কিত বিষয় মেনে চলার জন্যও কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।’
পুরস্কারের নীতি:
বাজেটের নথিতে বলা হয়েছে, নতুন করদাতাদের শনাক্তকরণ এবং রাজস্ব একত্রীতকরণসহ অসাধারণ পেশাদারিত্ব প্রদর্শনকারী কর কর্মকর্তাদের স্বীকৃতি ও পুরস্কারের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, নতুন সংশোধনী এবং তার ফলে আইনি পরিবর্তনগুলো কর বিভাগের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে।
তিনি বলেন, এর মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের গতি বাড়বে এবং এটি সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে একটি ইতিবাচক এবং কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা:
২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা, যেখানে এনবিআর কর্তৃক রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
এছাড়া এনবিআর বহির্ভূত উৎস থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং বাকি ৩৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে কর বহির্ভূত উৎস থেকে।
এনবিআরের মোট অর্থের মধ্যে ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা আয়, মুনাফা ও মূলধন কর থেকে, ভ্যাট থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার ১৬২ কোটি টাকা, পরিপূরক কর থেকে ৫৭ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা, আমদানি শুল্ক থেকে ৩৭ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৫৫ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ৩ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর থেকে আসবে ১ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা।