ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার ও প্রাসঙ্গিক হবে। বাংলাদেশ পরবর্তী দশকে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ ২০টি বাণিজ্যিক অংশীদার দেশের মধ্যে স্থান করে নিতে চায়।
আগামী ৩১ জানুয়ারি দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ সুফিউর রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দুই দেশের ব্যাপক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো যৌথভাবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে অধিক সম্পর্কযুক্ত হতে চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশের হাইকমিশনার বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশ সম্পর্কে অস্ট্রেলিয়ার উপলব্ধি এবং বাংলাদেশের প্রতি গুরুত্বের ধরন বদলেছে। ২০০৫ বা ২০১০ এর বাংলাদেশ থেকে আজকের বাংলাদেশের যে অনেক পরিবর্তন সে বিষয়টি গত তিন-চার বছরে আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমাদের সক্ষমতা খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি ।
তিনি বলেন, বিগত দশকগুলোতে বাংলাদেশের প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত ছিল। কিন্তু সেসময় একটি দুর্যোগপ্রবণ ও সাহায্য-নির্ভর দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে মনে করা হতো। তাই বাংলাদেশকে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উদীয়মান মধ্যম অর্থনীতি এবং আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে তুলে ধরার মাধ্যমে আমরা সে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছি।
অস্ট্রেলিয়ার দিক থেকে ধারণার ব্যাপক পরিবর্তনের কথা তুলে ধরে সুফিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে অস্ট্রেলিয়ার নতুন দৃষ্টিভঙ্গী সৃষ্টিতে গত তিন-চার বছর বাংলাদেশ মিশনের নিরন্তর প্রচেষ্টার সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে।
তিন দশকের দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই কূটনীতিক বলেন, অস্ট্রেলিয়ার সাথে বাংলাদেশের ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক অ্যারেঞ্জমেন্ট (টিফা) স্বাক্ষর, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর গত ১ বছরে বেশ কয়েকবার টেলিফোনে কথোপকথন এবং গ্লাসগোতে কপ-২৬ সম্মেলনের সময় অস্ট্রেলিয়ার পক্ষের উৎসাহে প্রধানমন্ত্রী মরিসনের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাতসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়।
স্বাধীনতা অর্জনের পর দ্রুততম সময়ে ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার তৎকালীন সরকার সেদেশের সকল রাজনৈতিক পক্ষের মতৈক্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সূত্রপাত ঘটে। অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশের স্বীকৃতির ফলে অন্যান্য দেশের স্বীকৃতি ত্বরান্বিত হয়।
তৎকালীন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী গফ হুইটলাম ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকা সফর করেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের মাধ্যমে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সূচনা করেন। এপর্যন্ত গফ হুইটলাম গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশ সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রদূত এই দুই মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কথা স্মরণ করে বলেন, আমি মনে করি- জাতির পিতাকে হারিয়ে বাংলাদেশ যেমন পথ হারিয়ে কাঙ্খিত লক্ষ্য থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়ে, তেমনি ১৯৭৫ সালে গফ হুইটলামের সফরের মধ্য দিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যে দৃঢ় ভিত্তি রচিত হয়েছিল, পরবর্তীতে তা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের পুনর্গঠন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা অব্যাহত থাকলেও দু’দেশের সম্পূর্ণ বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলোর তুলনায় তা ছিল নগণ্য।
অস্ট্রেলিয়া ছাড়া নিউজিল্যান্ড ও ফিজিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এই জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, দুই দশক আগে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে অস্ট্রেলিয়ায় শুল্কমুক্ত-কোটা মুক্ত বাজারের প্রবেশাধিকারের সিদ্ধান্তে পরিস্থিতির উন্নতি শুরু হয়। তবে এক দশকে অস্ট্রেলিয়ার বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি, বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার রপ্তানি বৃদ্ধিসহ অস্ট্রেলিয়ার উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে বাংলাদেশের প্রতি অস্ট্রেলিয়ার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ - দ.কোরিয়ার সমঝোতা স্মারক সই