বর্তমান অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪১ শতাংশ রাজস্ব সংগ্রহ করতে পেরেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। করোনা মহামারির এই চরম প্রতিকূলতার মধ্যেই রাজস্ব আয়ের লক্ষমাত্রা পূরণে আঞ্চলিক কার্যালয় সমূহেকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছে এনবিআর।
বর্তমান পরিস্থিতি কথায় মাথায় রেখে সকলকে লক্ষমাত্রা পূরণে কাজ করতে এবং বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগযোগ করতে আঞ্চলিক অফিসগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ: আইএমএফ
২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাজেটে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট হতে রাজস্ব বোর্ডের মোট আয় ধরা হয়েছিল ১ কোটি ২৭ লাখ ৭৪৭ কোটি টাকা। কিন্তু এ বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ভ্যাট আদায় হয়েছে মাত্র ৫৩ হাজার ৮১ কোটি টাকা, যা মোট লক্ষমাত্রার মাত্র ৪১.৫৫ শতাংশ।
কাজে ধীরগতি
আমদানি খাত থেকে ৪৫ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষমাত্র নির্ধারণ করা হলেও এবছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত মাত্র ১৯ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব হয়েছে। শুধু জানুয়ারি মাসেই সংগ্রহ করা হয় ২ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: শুল্ক আদায় প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন করবে এনবিআর
গত অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ১৭ হাজার ৮১৪ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে পেরেছিল এনবিআর এবং ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের সংগ্রহ ছিল ২ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা।
মাসিক হিসেবে বর্তমান অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ১০.৩২ শতাংশ এবং প্রথম সাত মাসের হিসেবে প্রবৃদ্ধি ১০.৩৫ শতাংশ।
অপরদিকে আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো থেকে ভ্যাট সংগ্রহের লক্ষমাত্রা ছিল ৮২ হাজার ১৯২ কোটি। কিন্তু এবছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এনবিআর মাত্র ৩৩ হাজার ৪২২ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। কেবল জানুয়ারি মাসেই ৫ হজার ৫৬৬ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় করা হয়।
গত অর্থবছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ৩৪ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা এবং শুধু জানুয়ারি মাসেই ৫ হাজার ৭১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিল।
আরও পড়ুন: করের আওতা বাড়াতে এনবিআরের সর্বাত্মক চেষ্টা
আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো হিসেবে, মাসিক রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ৯.৭৬ শতাংশ এবং প্রথম সাত মাসের হিসেবে রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে ২.১২ শতাংশ।
রাজস্ব আয়ে করোনা আঘাত
এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকতা ইউএনবিকে বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে লক্ষমাত্রা ঠিক রেখে রাজস্ব আদায় খুব একট সহজ কাজ না।
তিনি বলেন, ‘আমরা সকলেই বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে অবগত আছি এবং পরিস্থিতি যেকোনো সময় ভালো বা খারাপ হতে পারে। কিন্তু লক্ষমাত্রা অর্জনে আমাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে এবং কাজ এগিয়ে নিতে হবে।’
বড় কোম্পানিগুলোর সাথে যোগযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমেই রাজস্ব আদায়ের একটা বড় অংশ পূরণ করা সম্ভব হবে। কারণ বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেই মোট রাজস্বের একটা বড় অংশ আদায় হয়ে থাকে।
রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষমাত্রা
সরকারি দাপ্তরিক নথি অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৯.৬ শতাংশ এবং ৯.৯ শতাংশ। রাজস্ব প্রবৃদ্ধির ধারাবাহি উন্নতি দেখে ধারণা করা হয়েছিল ২০১৯-২০ অর্থবছরের রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি হবে ১৬.১ শতাংশ। কিন্তু ২০২০ সালের জুন মাসে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকীর পরিকল্পনার শেষে দেখা যায় রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হার ছিল ১২.৭ শতাংশ।
২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে এনবিআর ভুক্ত আয় ধরা হয় ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআর বহির্ভূত আয় ধরা হয় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া শুল্কহীন আয় নির্ধারণ করা হয় ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআর এর মোট আয়ের মধ্যে, ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা আদায় হবে আয়কর, মুনাফা এবং মূলধন কর এর মাধ্যমে। এছাড়া ভ্যাট থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা, সম্পূরকশুল্ক থেকে ৫৭ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা, আমদানি শুল্ক থেকে ৩৭ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৫৫ কোটি টাকা এবং আবগারি শুল্ক থেকে ১ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করবে রাজস্ব বোর্ড।