বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত পাঠানোর হুমকি দিয়ে চলমান আন্দোলনকে দমন করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ‘বিএনপি আন্দোলনের নামে বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবারও কারাগারে পাঠানো হবে’- বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
ফখরুল বলেন,‘দেশ যখন চরম অব্যবস্থাপনা, চরম অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এমন হুমকি দিচ্ছেন। তিনি যদি মনে করেন এটা গণতন্ত্রের আন্দোলনকে ব্যাহত বা দমন করবে, তাহলে তিনি ঠিক ভাবছেন না।’
তিনি বলেন, জনগণের এই আন্দোলনকে কেউ দমাতে পারবে না। মানুষ তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এই ধরনের হুমকি এই আন্দোলনের কিছুই করতে পারবে না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তার (প্রধানমন্ত্রী) বক্তব্য প্রমাণ করেছে যে তারা প্রতিহিংসাপরায়ণ এবং তারা গণতন্ত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না।’
তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অবস্থায় এমন বক্তব্য দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: বিএনপির এমপিরা পদত্যাগ করতে প্রস্তুত; বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে: ফখরুল
সরকার সীমা লঙ্ঘন করছে
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারই তাদের সীমা লঙ্ঘন করছে। ‘তারা আজকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে এবং তারা তাদের সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে আমাদের সমাবেশে বাধা দিচ্ছে, যা কিনা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার।’
ফখরুল বলেন, ‘আপনারা কি কোনও সভ্য দেশে দেখেছেন যে সরকার ধর্মঘট করে?’ বরিশালে আমাদের সমাবেশের পাঁচ দিন আগে থেকেই পরিবহন চলাচল বন্ধ করেছে।
তিনি প্রশ্ন করে বলেন, পটুয়াখালী থেকে বরিশাল পর্যন্ত লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। ‘আপনি এটিকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?’
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আবারও ভুয়া নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'জনগণ এখন জেগে উঠেছে, জনগণ এসব প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড হতে দেবে না। তারা যেকোনও মূল্যে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর।’
ফখরুল বলেন, জনগণ আসলে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে তাদের সরকার ও সংসদ গঠন করবে। এর জন্য আমরা প্রথম শর্ত দিয়েছি প্রধানমন্ত্রীকে তার সরকারের সঙ্গে পদত্যাগ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘সরকার জনগণকে ভয় পায়। জনগণ জেগে উঠলে গণআন্দোলন হবে। আমি বিশ্বাস করি, গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের (আওয়ামী লীগ) সরে যেতে হবে।’
আরও পড়ুন: বিএনপির সমাবেশে বিপুল জনসমাগম মানেই তারা গণতন্ত্র ফিরে চায়: ফখরুল
রেমিটেন্স পাচারের অভিযোগ
ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা সম্পূর্ণ তাদের (আ.লীগ) দুর্নীতির ফল।
‘আজও পত্রিকায় বেরিয়েছে, গত ১০ বছরে যারা কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন তাদের এক-তৃতীয়াংশই বাংলাদেশি। রেমিটেন্সের পতনের মতো আপনি এর প্রমাণ পাবেন।’
তিনি আরও বলেন, রেমিটেন্স কমছে কিন্তু অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা আবার বেড়েছে।
ফখরুল বলেন, ‘তাহলে রেমিটেন্স কোথায় যাচ্ছে? এর আগে একদিন আমি বলেছিলাম,এসব রেমিটেন্স দেশ থেকে আরেক দেশে পাচার হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যারা জড়িত তারাই পাচার করছে। এ কারণে দেশে সংকট তৈরি হয়েছে।’
আরও পড়ুন: আ.লীগ নেতারা ছিন্নমূল থেকে বিত্তশালী হয়েছে: ফখরুল
সর্বশেষ বিভাগীয় সমাবেশ হবে ঢাকায়
মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় শেষ বিভাগীয় সমাবেশ হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ঘোষণা দিয়েছি প্রতিটি বিভাগে সমাবেশ করব। এরপর তারা কী করবে, কী করবে না তার দায় সরকারের ওপর।’
ফখরুল বলেন,গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য যে কোনও মূল্যে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
বিএনপি তার চলমান আন্দোলনের ধারা অব্যাহত রাখার অংশ হিসেবে ২৭ সেপ্টেম্বর ১০টি বিভাগীয় শহরে ধারাবাহিক গণসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
আয়োজকরা জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির নিন্দা,ভোলা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও যশোরে পুলিশের দ্বারা তাদের দলের পাঁচ নেতাকর্মীর মৃত্যু এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করতেই এই সমাবেশ।
কোনও রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সাধারণ নির্বাচন হওয়ার দাবি দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে বিএনপি। সরকার এ দাবিকে অসাংবিধানিক বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরে চারটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর শনিবার বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির ৫ম সমাবেশ হবে বরিশালে।
আরও পড়ুন: পায়রা সমুদ্রবন্দরে রিজার্ভের টাকা কীভাবে খরচ হয়েছে ব্যাখ্যা করুন: সরকারের উদ্দেশে ফখরুল