প্রাণবন্ত প্রকৃতির এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক আছে ভ্যালেন্টাইন ডে’র সাথে। তা না হলে কেনই বা বসন্ত বরণের সাথেই সময়রেখায় পদচিহ্ন রাখতে হবে! ঝরা পাতার ধুসর বিসর্জনের মুক্তি মেলে গাছে গাছে সবুজ পাতার হৈচৈ-এ। যেন দুঃখময় স্মৃতিগুলোকে চোখ রাঙিয়ে নতুন এক ভালবাসার দিন শুরুতে তৃপ্ত বাতাসে নৌকার পাল ছেড়ে দেয়া। তাতে বৈঠা হাতে হাজারো মানব-মানবীর পরিণয়ের উপাখ্যান। এমনি বিশেষ দিনটিকে চির স্মরণীয় করে রাখতে পারে প্রাণখোলা হাসি, শুভকামনা আর উপহার। ভাবনার রাজপথ জুড়ে প্রিয় মানুষটির অবিরাম পদচারণার টোটেম হিসেবে কাজ করা সেরকমি কয়েকটি ডিজিটাল উপহার নিয়ে আজকের ফিচার।
ডিজিটাল ভ্যালেন্টাইন ডে উপহার ২০২২
ডিজিটাল সাবস্ক্রিপশন
ইন্টারনেটের বদৌলতে টিভি-রেডিওর জায়গাটি এখন দখল করে নিয়েছে অনলাইন স্ট্রিমিং সাইটগুলো। এখন নিজের পছন্দ মতই বেছে বেছে উপভোগ করা যাচ্ছে সাম্প্রতিক মুভি ও সিরিজগুলো।
মুভি ও নাটক পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। নিদেনপক্ষে প্রতিটি স্ট্রিমিং সাইট এখন সব ধরনের দর্শকদের কথা মাথায় রেখেই সম্প্রচার করছে তাদের নিজ নিজ অরিজিনাল কন্টেন্টগুলো।
আরও পড়ুন: লিটল ম্যাগাজিন প্রদর্শনীর সময় বাড়ল
বিশ্ববিখ্যাত ওটিটি (ওভার-দ্যা-টপ) সাইট নেটফ্লিক্সের কন্টেন্টগুলোর জন্য প্রত্যেকেই মুখিয়ে থাকে। এর ৭.৯৯ মার্কিন ডলার বা ৬৮৭ টাকার বেসিক প্যাকেজটি এক মাসের জন্য একটি যুগোপযোগী উপহার হতে পারে। আর ৯.৯৯ মার্কিন ডলার বা ৮৫৯ টাকার স্ট্যান্ডার্ড প্ল্যানটিতে পুরো মাস জুড়ে এমনকি অনেক দূরে থাকলেও দুজনেই উপভোগ করা যাবে নিজ নিজ কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে।
এছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের কন্টেন্ট-এর জন্য হৈচৈ-এর গিফ্ট কার্ড দেয়া যেতে পারে। এর ৬ মাসের প্যাকেজটি ৩১৭ টাকা।
ভার্চুয়াল স্ক্র্যাপবুক
বিভিন্ন উপলক্ষে কার্ড পেতে সবাই ভালবাসে। ভ্যালেন্টাইন ডে তে নানা গিফ্ট শপগুলো আকর্ষণীয় নকশায় তৈরি করে থাকে কার্ডগুলো। কিন্তু স্ক্র্যাপবুক এই কার্ডের ধারণাকে দিয়েছে এক অভাবনীয় মাত্রা। কার্ডের নকশা ছাড়াও এখানে জুড়ে দেয়া যায় ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে তোলা বিভিন্ন আকারের ছবি। আর এর ডিজিটাল ভার্সনটির নয়নাভিরাম কন্টেন্টগুলো গ্রাহকদের মধ্যে রীতিমত মন্ত্রমুগ্ধতা সৃষ্টি করে। ফটোশপ সহ ইন্টারনেট জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফটো ইডিটরগুলোর জন্য দারুণ স্ক্র্যাপবুকগুলো এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ব্যবহারকারিদের অনেকেই সেই গ্রাফিক্যাল কন্টেন্টগুলো রীতিমত নিয়ম করে কালেকশানে রাখে। তাই ভ্যালেন্টাইন ডে’র উপহার হিসেবে এটি একটি সেরা উপায় হতে পারে।
আরও পড়ুন: সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর: ভারতীয় সংগীতের জগতে অবিস্মরণীয় উজ্জ্বল নক্ষত্র
এগুলো কেনা যেতে পারে বিশ্বখ্যাত ই-কমার্স সাইট অ্যামাজন থেকে। তবে একটু সৃজনশীলতা খাটালে নিজে নিজেই বানিয়ে নেয়া যায় মনোমুগ্ধকর কিছু স্ক্র্যাপবুক। ইন্টারনেটের যে কোন একটি ইমেজ ইডিটর দিয়ে খুব সহজেই বানিয়ে ফেলা যায় ভার্চুয়াল স্ক্র্যাপবুক। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সহজ ও জনপ্রিয় একটি সাইট হচ্ছে ক্যানভা। এর স্যাম্পল টেমপ্লেটগুলো ইডিট করে প্রিয় মানুষটির সাথে কাটানো সেরা মুহুর্তের ছবিগুলো একত্রিত করে অনায়াসেই বানিয়ে ফেলা যায় স্ক্র্যাপবুক। সাথে সাথে শেয়ারও করে দেয়া যায় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
অনলাইন জুকবক্স
শুধুমাত্র একটি স্থির চিত্র দিয়ে পটভূমিতে একসাথে অনেক গুলো গান বাজতে দেখা যায় জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং সামাজিক মাধ্যম ইউটিউবে। এটি ক্যাসেট প্লেয়ারের যুগের এ্যালবামে গান শোনার নস্টালজিয়া দেয়। মূলত অনলাইনে বিভিন্ন সাইট বা ইউটিউবেরই বিভিন্ন চ্যানেল থেকে সংগৃহীত গানের প্লেলিস্ট দিয়ে সাজানো হয় এই ডিজিটাল জুকবক্সগুলো।
ইউটিউবে এরকম প্লেলিস্ট তৈরি করা খুবই সহজ। যে কোন ভিডিও দেখার সময় ভিডিও ঠিক নিচেই সেভ বাটনে ক্লিক করে নতুন প্রদর্শিত ছোট্ট স্ক্রিণটি থেকে ক্রিয়েট নিউ প্লেলিস্টে ক্লিক করলেই তৈরি হয়ে যাবে প্লেলিস্ট। অতঃপর একে একে প্রিয় গানগুলোর ভিডিওতে যেয়ে সেগুলোকে এই প্লেলিস্টে অন্তর্ভূক্ত করা যাবে। তারপর ইউটিউবের হোম পেজ থেকে বা দিকে প্রদর্শিত সদ্য তৈরিকৃত প্লেলিস্টে ক্লিক করলে প্লেলিস্টটির নিজস্ব পেজ প্রদর্শিত হবে। আর ব্রাউজারের একদম উপর থেকে এই পেজটির ঠিকানা কপি করে নিয়ে শেয়ার করা যাবে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
আরও পড়ুন: রাজু ভাস্কর্যের সামনে নৃত্যরত ইরা: সপ্রতিভ উত্থানে এক বাংলাদেশি ব্যালেরিনা
ভিডিও ডায়েরি
এটাকে বলা যেতে পারে ভার্চুয়াল স্ক্র্যাপবুকের ভিডিও ভার্সন। প্রিয় মানুষটির সাথে কাটানো সেরা মুহূর্তগুলোর ফুটেজ নিয়ে বানানো যেতে পারে এই ভিডিও ডায়েরি। ছোট-খাট একটা ফিল্মে পরিণত হবে ভিডিও ডায়েরিটা। ভিডিও ইডিটিং-এর মত বড় কাজ মনে হলেও এই ভিডিও তৈরি মোটেই তা নয়। ভিডিও বানানোর কারিগরি জ্ঞান থাকলে ভালো, তবে না থাকলেও তৈরি করা যাবে একদম নিখুঁত মানের ভিডিও। অনলাইনে খুঁজলে এমন অনেক ভিডিও ইডিটর পাওয়া যাবে, যেখানে ক্যামেরা দিয়ে তোলা ফুটেজগুলো পরপর বসিয়ে বানানো যাবে দারুণ একটি ভিডিও। জলছাপকে ঝামেলা মনে হলে কিনে ফেলতে হবে সেই ভিডিও ইডিটরটির সাবস্ক্রিপশন। তবে এক্ষেত্রে জলছাপ উপেক্ষা করে কন্টেন্টে জোর দেয়াটাই উত্তম। এই ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ভিডিও টেমপ্লেট পাওয়া যায় রেন্ডারফরেস্ট-এ। এত উন্নত মানের, প্রোফেশনাল এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ টেমপ্লেট অনলাইনে নেই বললেই চলে। এখানকার স্লাইডশোগুলোও বেশ চমৎকার। এর প্রোফেশনাল ইন্ট্রো ও ইন্ডিং ভিডিও সংযোজন করার পর তৈরিকৃত ভিডিও ডায়েরিটিকে মনে হতে পারে পরিপূর্ণ একটি শর্টফিল্ম।
পরিশেষে
প্রযুক্তির ক্রমবিকাশে সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়েছে মানুষের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম। একই পাত্রে রঙ বদলেছে প্রয়োজনীয়তাগুলো। এর মাঝেও মানুষ আগলে রেখেছে তাদের আদিম ও অকৃত্রিম অনুভূতিগুলোকে। ডিজিটাল ভ্যালেন্টাইন ডে উপহার দেয়ার মাধ্যমগুলো যেন তারই জানান দিচ্ছে। হাত দ্বারা স্পর্শনীয় বস্তুগুলো বর্তমানে শুধু দর্শনেন্দ্রিয় ও শ্রবণেন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করা বস্তুতে রূপান্তর হলেও, শুভকামনা দেয়ার ছলে অটুট রয়েছে যত্ন নেয়ার ভনিতাটি।