সবশেষ চারবারের দেখায় আতলেতিকো মাদ্রিদকে হারাতে পারেনি রিয়াল মাদ্রিদ। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর ম্যাচে এসে অবশেষে দলটির সেই অপরাজেয় যাত্রা থামিয়েছে টুর্নামেন্টের ইতিহাসের সফলতম দলটি।

মঙ্গলবার রাতে সান্তিয়াগো বের্নাবেউতে শেষ ষোলোর প্রথম লেগে নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের ২-১ গোলে হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।

ম্যাচের শুরুতেই দুর্দান্ত এক গোল করে রদ্রিগো রিয়ালকে এগিয়ে নেওয়ার পর ৩২তম মিনিটে হুলিয়ান আলভারেসের দর্শনীয় গোলে সমতায় ফেরে আতলেতিকো। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের পার্থক্য গড়া গোলটি করেন রিয়ালের স্প্যানিশ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ব্রাহিম দিয়াস।

এই জয়ে অল্প ব্যবধানে হলেও আতলেতিকোর চেয়ে এগিয়ে রইল রিয়াল মাদ্রিদ। আগামী বুধবার ফিরতি লেগে আতলেতিকোর মাঠে খেলতে নামবে শিরোপাধারীরা।

আরও পড়ুন: আর্জেন্টাইন স্পাইডারম্যানের গোলে শীর্ষে উঠল আতলেতিকো মাদ্রিদ

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ৫০০তম ম্যাচে খেলতে নেমে রেকর্ড গড়ার রাতে চতুর্থ মিনিটে গোল করে শুরুতেই এদিন উত্তেজনার পারদ চড়িয়ে দেন রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলীয় উইঙ্গার রদ্রিগো। নিজেদের অর্ধ থেকে ফেদেরিকো ভালভের্দের ডান পাশের টাচলাইন ধরে বাড়ানো পাস ধরে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যান রদ্রিগো। এরপর আতলেতিকোর দুই ডিফেন্ডারকে ড্রিবল করে বক্সে ঢুকে দূরের পোস্টে অসাধারণ এক শট নেন তিনি, আর ঝাঁপিয়ে পড়া ইয়ান ওবলাকের আওতার বাইরে দিয়ে গিয়ে জালে জড়িয়ে যায় বল। ফলে উল্লাসে ফেটে পড়ার উপক্রম হয় বের্নাবেউ।

এটি ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রদ্রিগোর ২৫তম গোল। এর ফলে পঞ্চম কনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে ২৫ গোল করার রেকর্ড গড়লেন তিনি। ২৪ বছর ৫৪ দিন বয়সে এই কীর্তি গড়া রদ্রিগোর উপরে রয়েছেন রাউল গন্সালেস (২৩ বছর ২৫২ দিন), লিওনেল মেসি (২২ বছর ২৮৬ দিন), কিলিয়ান এমবাপ্পে (২২ বছর ৮০ দিন) ও আর্লিং হালান্ড (২২ বছর ৪৭ দিন)।

গোল পেয়েই আক্রমণের ঝড় তোলে রিয়াল মাদ্রিদ। তবে কোনোরকমে সেগুলো প্রতিহত করে ব্যবধান বাড়তে দেয়নি আতলেতিকোর খেলোয়াড়রা। রিয়ালের আট-দশ মিনিটের আক্রমণ-ঝড় সামলে ধীরে ধীরে খেলায় ফিরতে শুরু করে নগর প্রতিদ্বন্দ্বীরা। ম্যাচের গতি কমিয়ে, পজেশন ধরে রেখে আক্রমণে উঠতে থাকে তারা। এর ধারাবাহিকতায় ২৬তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগও তৈরি হয়, তবে গোলমুখে সামুয়েল লিনোর উদ্দেশে বাড়ানো পাসটি থিবো কোর্তোয়া ধরতে ব্যর্থ হলেও শেষ মুহূর্তে পড়ে যেতে যেতে তা ক্লিয়ার করে দলকে বিপদমুক্ত করেন ভালভের্দে।

এর ছয় মিনিট পরে অবশ্য হুলিয়ান আলভারেসের একক নৈপুণ্যের কাছে রিয়ালের সব প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে।

সতীর্থের কাছ থেকে আসা পাস ধরে বাঁ পাশ দিয়ে রিয়ালের বক্সে ঢুকেই দূরের পোস্ট বরাবর কোনাকুনি শট নেন ‘লা আরানিয়া’, আর মাপা সেই শট কোর্তোয়ার আওতার সামনে দিয়ে পোস্টে আঘাত করে গন্তব্যে পৌঁছে যায়। ফলে যেমন দুর্দান্ত এক গোল করে এগিয়ে যায় রিয়াল, তেমনই এক দর্শনীয় গোলে সমতায় ফেরে আতলেতিকো।

আরও পড়ুন: জিরোনাকে হারিয়ে ফের বার্সেলোনাকে ধরল রিয়াল মাদ্রিদ

সমতায় ফেরার কয়েক মিনিট আগে থেকেই অবশ্য ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় সিমিওনের শিষ্যরা। গোল পাওয়ার পর তাদের দাপট আরও বাড়ে। বলের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রেখে একের পর এক সুযোগ তৈরির প্রচেষ্টা চালাতে থাকে তারা। তবে বল না পেলেও ধৈর্য্য ধরে আতলেতিকোর আক্রমণগুলো রুখে দেওয়ার চেষ্টায় ব্রতী হয় রিয়াল।

শেষের মিনিট দুয়েক অবশ্য আক্রমণে উঠেছিল রিয়াল মাদ্রিদ, তবে তাতে তেমন জোর ছিল না। ফলে ১-১ সমতা নিয়েই বিরতিতে যায় দুদল।

প্রথমার্ধে ৫৪ শতাংশ সময় বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে তিনটি শট নেয় আতলেতিকো, যার একটি শট ছিল লক্ষ্যে, আর তা থেকেই আসে তাদের গোল। অন্যদিকে, পাঁচটি শট নিয়ে তিনটি লক্ষ্যে রেখেও একটির বেশি গোল আদায় করতে ব্যর্থ হয় রিয়াল মাদ্রিদ।

বিরতির পরও আত্মবিশ্বাসী ফুটবল খেলতে থাকে আতলেতিকো। ৫৩তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগও তৈরি করে তারা, কিন্তু কিছুক্ষণ পরই প্রথমার্ধের পুনরাবৃত্তি করে ফের গোল করে ঘরের মাঠের সমর্থকদের আনন্দে ভাসান ব্রাহিম দিয়াস।

৫৫তম মিনিটে সতীর্থের কাছ থেকে বল ধরেই ড্রিবল করে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়েন ব্রাহিম। এরপর জটলার ভেতর থেকে দূরের পোস্ট বরাবর নিচু শট নেন তিনি, আর ওবলাক কিছু বুঝে ওঠার আগেই বল গোললাইন অতিক্রম করে যায়।

দ্বিতীয়বার পিছিয়ে পড়ার পর ফের নিয়ন্ত্রিত ফুটবলে মনোযোগী হয় আতলেতিকো মাদ্রিদের খেলোয়াড়রা, তবে প্রথমার্ধের মতো এবার বোঝাপড়া ও আক্রমণে ততটা ধার ছিল না তাদের। ফলে গোল করা তো দূরের কথা, প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই ব্যর্থ হয় দলটি। এর সুযোগ নিয়ে ফের বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে রিয়াল, এতে করে রক্ষণাত্মক খেলতে বাধ্য হয় লস রোহিব্লাঙ্কোসরা।

একপর্যায়ে আক্রমণভাগ থেকে আন্তোয়ান গ্রিজমানকে উঠিয়ে ইংলিশ ডিফেন্ডার কনর গ্যালাগারকে মাঠে নামান সিমিওনে। ফলে ২-১ ব্যবধান যে আর না বাড়িয়ে ঘরে ফিরতে চাইছে আতলেতিকো—তা স্পষ্ট হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নকআউট ড্র: মুখোমুখি দুই মাদ্রিদ, বার্সেলোনার স্বস্তি

তবে পজেশন ধরে রেখে বারবার আক্রমণে উঠলেও আতলেতিকোর রক্ষণ ভেঙে পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছিল ভিনিসিয়ুস-এমবাপ্পেদের।

এভাবেই নির্ধারিত সময়ে শেষ হলে যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে তৃতীয় গোলটি করার দারুণ সুযোগ পায় রিয়াল, কিন্তু এমবাপ্পের গোলমুখে বাড়ানো ক্রসে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হয়ে নিশ্চিত গোলের সেই সুযোগ নষ্ট করেন ভিনিসিয়ুস।

এরপর আর তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু না হওয়ায় বাজে শেষের বাঁশি, আর ২-১ গোলে এগিয়ে থেকেই প্রথম লেগের ম্যাচ শেষ করে কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা। অপরদিকে, বড় ব্যবধানে না হারার স্বস্তি নিয়ে ঘরে ফেরে আতলেতিকো মাদ্রিদ।

এই জয়ে চ্যাম্পিন্স লিগে অপরাজেয় যাত্রায় ১০ ম্যাচে বাড়িয়ে নিল রিয়াল মাদ্রিদ। ২০২২-২৩ মৌসুমের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ঘরের মাঠে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে সবশেষ হেরেছিল দলটি। ৪-০ গোলে ওই ম্যাচটিতে হারের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬টি জয় ও চারটি ড্র করেছে মাদ্রিদ জায়ান্টরা।

দিনের অপর ম্যাচে পিএসভি আইন্ডহোভেনকে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত করে সেমিফাইনাল প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে আর্সেনাল। এছাড়া, ক্লাব ব্রুজকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের জন্য নিজেদের অবস্থান মজবুত করেছে উনাই এমেরির অ্যাস্টন ভিলা। তবে, ঘরের মাঠে শুরুতে এগিয়ে গিয়েও লিলের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করেছে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড।

শেষ ষোলোর প্রথম লেগের বাকি চার ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে বুধবার। এদিন ফেয়েনুর্ডের মাঠে ইন্টার মিলানের ম্যাচটি দিয়ে শুরু হবে খেলা। পরে মাঠে নামবে বায়ার্ন মিউনিখ-বায়ের লেভারকুজেন, পিএসজি-লিভারপুল ও বেনফিকা-বার্সেলোনা।