বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা আইনি পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করব। আমরা এটি খতিয়ে দেখব। যেখানে ভুল তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে সেখানে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারি। দেখা যাক।’
একটি উদাহরণ তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী নেতা থাকাকালীন কাউকে কখনো তার দেহরক্ষী হিসেবে নিয়োগ দেননি, তবে এখন একটি বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (এসএসএফ) রয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদন: তীব্র প্রতিবাদ জানাল সেনাবাহিনী
আল জাজিরার প্রতিবেদনে দুই ব্যক্তির ছবি দেখিয়ে তাদের শেখ হাসিনার দেহরক্ষী বলে দাবি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা সত্য নয়, সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি কখনো দেহরক্ষী ব্যবহার করেননি।’
ড. মোমেন বলেন, ‘শেখ হাসিনার পেছনে কাউকে দেখা গেলেই কেউ বলতে পারবে না যে তিনি তার দেহরক্ষী। এমনকি আগস্টে তার (প্রধানমন্ত্রী) ওপর গ্রেনেড হামলার সময় দলীয় নেতারা তাকে রক্ষা করেছিলেন, কোনো দেহরক্ষী নয়।’
মন্ত্রী জানান, তারা শুনেছেন যে আল জাজিরা টাকা নিয়ে এই কাজটি করেছে।
মরিয়া হয়ে চালানো ‘নোংরা প্রাচারণা’ প্রত্যাখ্যান করল বাংলাদেশ
‘মিথ্যা সংবাদ প্রচারের জন্য তারা (আল জাজিরা) বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এটা সত্যিই খুব দুঃখজনক,’ বলেন তিনি।
ড. মোমেন আরও বলেন, আল জাজিরার এ জাতীয় একটি প্রতিবেদন করা অনুশোচনীয় এবং এ জন্য তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের দ্রুত উন্নয়ন অনেকে মেনে নিতে পারছেন না, এমনকি কোভিড-১৯-এর সময়েও বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থানে ছিল।
চ্যানেলটি মুসলিম দেশগুলোকে টার্গেট করে সংবাদ প্রচার করে- এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘তারা বাংলাদেশের অর্জন পছন্দ করে না। এটি ঈর্ষা।’
বিএনপি নেতৃত্ব সংকটে ভুগছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ চ্যানেলটি বন্ধ করে দেবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন জানান, এমন কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই কারণ বিশ্ব উন্মুক্ত।
‘তবে আমরা আশা করি আল জাজিরা আরও দায়িত্বশীল হবে,’ বলেন তিনি।
লন্ডন এবং অন্য কোথাও থেকে চরমপন্থী ও তাদের মিত্রদের চালানো মরিয়া ‘নোংরা প্রাচারণা’ প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ সরকার।
সেই সাথে সরকার আফসোস প্রকাশ করে বলেছে, অসাধারণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং অগ্রগতির প্রমাণিত নজির থাকা বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সরকারকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে তাদের কূট রাজনৈতিক অভিসন্ধির জন্য আল জাজিরা নিজেদের হাতিয়ার হতে দিয়েছে।
জনকূটনীতি প্রচারে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশ সরকার আল জাজিরা সংবাদ চ্যানেলের ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’শীর্ষক মিথ্যা ও মানহানীকর প্রতিবেদনটি সম্পর্কে জানতে পেরেছে।
মন্ত্রণালয় সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে জানায়, এ প্রতিবেদনটি কটাক্ষ ও পরোক্ষ ইঙ্গিতের বিভ্রান্তিকর ধারাবিবরণী ছাড়া আর কিছুই নয়। যা দৃশ্যত জামায়াতে ইসলামী চরমপন্থী গোষ্ঠীর সহযোগী কুখ্যাত ব্যক্তিদের চালানো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ‘নোংরা প্রাচারণা’। যে গোষ্ঠী ১৯৭১ সালে স্বাধীন দেশ হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্মের পর থেকেই এর প্রগতিশীল এবং ধর্মনিরপেক্ষ নীতির বিরোধিতা করে আসছে।
প্রতিবেদনের ঐতিহাসিক অংশটি এমনকি ১৯৭১ সালের ভয়াবহ গণহত্যার কথা উল্লেখ করতেও ব্যর্থ হয়েছে। যেখানে জামায়াতের দুষ্কৃতিকারীরা লাখ লাখ বাঙালি বেসামরিক ব্যক্তিকে হত্যা এবং দুই লাখের অধিক বাঙালি নারীকে ধর্ষণ করেছিল। এটা তুলে না ধারা আল জাজিরার সংবাদের রাজনৈতিক পক্ষপাতের প্রতিচ্ছবি ছাড়া আর কিছু নয়, বলা হয় বিবৃতিতে।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন প্রজন্মের অনুসন্ধিৎসু মনকে কাজে লাগাতে হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহতদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলার দায়ে দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শাস্তি পাওয়া ডেভিড বার্গম্যানের প্রতিবেদনটির প্রধান ভাষ্যকার থাকার বিষয়টিও বিবৃতিতে উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয় যে আল জাজিরার অভিযোগগুলোর মূল ‘উৎস’একজন অভিযুক্ত আন্তর্জাতিক অপরাধী যাকে আল জাজিরা নিজেই ‘মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত’ বলে দাবি করেছে।
‘প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে এই নির্দিষ্ট ব্যক্তির সংযোগের এক ফালি প্রমাণও নেই। একজন মানসিকভাবে অস্থিতিশীল ব্যক্তির কথার ভিত্তিতে উপসংহার টানা একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ চ্যানেলের জন্য অত্যন্ত দায়িত্বহীনতা,’ জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এটা অবাক করার মতো নয় যে এ প্রতিবেদনের সাথে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারের মিল রয়েছে। যা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের পৃষ্ঠপোষকতায় কিছু দোষী সাব্যস্ত পলাতক অপরাধী ও নিন্দিত ব্যক্তি অভ্যাসগতভাবে চালিয়ে থাকেন। যেখানে কিছু ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক চরমপন্থী গোষ্ঠী ও সংবাদ মাধ্যম বিশেষ করে আল জাজিরার সাথে ষড়যন্ত্র করা হয়।