হাইকোর্ট বলেছে, মাদরাসায় নির্যাতন, বিভিন্ন মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন, এমনকি যৌন নির্যাতনের ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। এ বিষয়ে অনেক আগে থেকে আদালতের নির্দেশনা আছে। আগের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থীকেই শারীরিক বা মানসিকভাবে নির্যাতন করা যাবে না। নির্দেশনাগুলো সব জায়গায় যাতে কার্যকর হয়। কমিটি গঠনসহ আদালতের নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়নে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ যাতে সচেষ্ট থাকে।
আরও পড়ুন: সেই মাদরাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা, জানতে চায় হাইকোর্ট
আট বছর বয়সী ওই মাদরাসা ছাত্রকে বেধড়ক পেটানোর ঘটনায় মাদরাসা শিক্ষক মাওলানা মো. ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপ বিষয়ক শুনানিতে রবিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মাদরাসার নির্যাতিত শিশুর যেন পড়ালেখা ব্যাহত না হয় সেদিকে নজর রাখতে বলেছে আদালত। এছাড়া শিশু ও শিশুর পরিবারের সদস্যরা যেন নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগে সে বিষয়েও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এর আগে চট্টগ্রামের ডিসি ও এসপির পক্ষ থেকে পৃথক প্রতিবেদন দিয়ে ওই শিশু নির্যাতনের ব্যাপারে গৃহীত পদক্ষেপ উপরোক্ত বেঞ্চে তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার প্রতিবেদন দুটি উপস্থাপন করেন।
আরও পড়ুন: মাদরাসায় শিশু শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পিটুনির ভিডিও ভাইরাল, শিক্ষক গ্রেপ্তার
জেলা প্রশাসকের (ডিসির) প্রতিবেদনে বলা হয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিশুটিকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়া, শিশুটিকে মানসিকভাবে প্রফুল্ল রাখতে চকলেট, কেক, গল্পের বইসহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা উপহার দেয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপারের (এসপির) প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে তদন্তনাধীন। এছাড়া, ঘটনার পরদিন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষককে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে। ঘটনার পরপরই শিশুটির গ্রামের বাড়িতে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন: ফেনীতে মাদরাসাছাত্রকে পিটিয়ে জখমের অভিযোগে শিক্ষক গ্রেপ্তার
জানা গেছে, মারকাজুল কোরআন ইসলামি একাডেমি মাদরাসার হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থী আট বছর বয়সী শিশু ইয়াসিনকে মঙ্গলবার বিকালে দেখতে যান মা পারভিন আক্তার ও বাবা মোহাম্মদ জয়নাল। কিন্তু ফেরার সময় ছোট্ট শিশুটি মা-বাবার সাথে বাড়ি যাওয়ার বায়না ধরে। একপর্যায়ে শিশুটি মা-বাবার পিছু পিছু মাদরাসার মূল ফটকের বাইরে চলে গেলে ক্ষিপ্ত হন মাদরাসার শিক্ষক মো. ইয়াহিয়া। মূল ফটকের বাইরে যাওয়ায় শিশুটিকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন তিনি। এ সময় শিশুটির বাঁচার আকুতিও শোনেননি ওই শিক্ষক। গত মঙ্গলবার রাত থেকে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিশু নির্যাতনের ভিডিওটি ভাইরাল হয়।
পরে ওই ঘটনায় থানায় মামলা করে শিশুটির পরিবার। ওই মামলায় অভিযুক্ত মারকাজুল কোরআন ইসলামি একাডেমি মাদরাসার হিফজ বিভাগের শিক্ষক হাফেজ ইয়াহিয়াকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে হাটহাজারী থানা পুলিশ। আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে।
ওই ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন ১১ মার্চ আদালতে তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। সেদিন শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ ওই ঘটনায় নেয়া পদক্ষেপ রবিবারের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে মৌখিক আদেশ দেয়। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলে পদক্ষেপ সংক্রান্ত তথ্য জানাতে বলা হয়। তার ধারাবাহিকতায় রবিবার রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার পদক্ষেপ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তুলে ধরেন।