কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে সোমবার দেশে সাত দিনের লকডাউন শুরু হওয়ায় সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকার বেশিরভাগ রাস্তা নির্জন ছিল।
সকালে রাস্তায় অল্প সংখ্যক প্রাইভেট কার, রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করুন: প্রধানমন্ত্রী
সরকার, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসগুলো 'সীমিত জনবল' দ্বারা পরিচালনার অনুমতি দেয়ায় অনেককে তাদের অফিসে পৌঁছানোর জন্য রিকশা ও অটোরিকশা ভাড়া করতে দেখা গেছে।
মতিঝিলে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত এবং রামপুরার বাসিন্দা রেহানা বেগম বলছিলেন, 'আজ আমার অফিসে পৌঁছাতে অনেক বেশি ভাড়ায় একটি অটোরিকশা নিতে হয়েছে এবং প্রতিদিন এত পরিমাণ ব্যয় করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।'
তবে লকডাউন বাস্তবায়নের জন্য সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দোকান ও শপিংমলগুলো বন্ধ ছিল।
বিভিন্ন এলাকায় কাঁচাবাজারগুলো খোলা দেখা গেলেও ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল।
লকডাউন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দিনমজুর হারিস মিয়া বলেন, 'আগের বছরের কষ্টের দিনগুলো আমাদের জীবনে আবার ফিরে এসেছে, আমাদের নিয়ে ভাবার কেউ নেই। লকডাউন চলতে থাকলে ক্ষুধা আমাদের শেষ করে দেবে।'
আরও পড়ুন: সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত-জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যদের দৃঢ় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জনসাধারণের অপ্রয়োজনীয় চলাচল এবং সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করে ভাইরাসের সংক্রমণ কমিয়ে আনা এই লকডাউনের মূল লক্ষ্য।
প্রাণঘাতী করোনভাইরাস মোকাবিলায় এটি বাংলাদেশের প্রথম আনুষ্ঠানিক লকডাউন। গত বছরের ২৬ মার্চ সরকার করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় লকডাউন কার্যকর করার পরিবর্তে পরিবহন বন্ধের পাশাপাশি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল।
গত কয়েক দিন যাবত দেশে করোনায় আক্রান্তের পরিমাণ রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় রবিবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সারাদেশে সপ্তাহব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করেন।
এই সময় বেশিরভাগ অফিস এবং কারখানা খোলা থাকবে, তবে কর্মচারীরা স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশিকা বজায় রেখে পালা করে কাজ করবেন।
গত সপ্তাহে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় ১৮ দফা নির্দেশনাও জারি করে।
বিধি-নিষেধসমূহ
রবিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ করোনা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য এবং লকডাউন বাস্তবায়নের জন্য জনগণের চলাচল ও অন্যান্য কর্মকাণ্ডের উপর ৭ দিনের জন্য বিধিনিষেধ আরোপ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
গেজেট অনুসারে, সব ধরনের গণপরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে সোমবার থেকে মাঠে থাকার ঘোষণা ডিএসসিসি মেয়রের
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ লকডাউনের সময় অভ্যন্তরীণ বিমান ও যাত্রীবাহী ট্রেন স্থগিত করার এবং পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জরুরী পরিষেবা, পণ্য বহন, উত্পাদন, বিদেশী যাত্রী এবং ফেরত আসা প্রবাসীরা এই বিধি-নিষেধের আওতার বাইরে থাকবে।
আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন-ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও আদালত এবং বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। তারা শুধু প্রয়োজনীয় জনবলকে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা-নেওয়া করতে পারবে।
শিল্প-কারখানা ও নির্মাণ কার্যাদি চালু থাকবে। শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া করতে হবে।
এছাড়া, বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএকে শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের চিকিত্সা সেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: দেশে করোনায় একদিনে রেকর্ড ৭ হাজারের বেশি শনাক্ত, মৃত্যু আরও ৫৩
জনগণের চলাচল সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সীমিত থাকবে এবং অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না।
স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খোলা জায়গা থেকে কেনাবেচা করা যাবে যা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করবে।
অন্যদিকে, সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ব্যংকিং কার্যক্রম চলবে। এর বাইরে কোনো সময়ে লেনদেন করা যাবে না।
এছাড়াও সশস্ত্র বাহিনী উপযুক্ত স্থানে মাঠ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
জেলা এবং মাঠ প্রশাসন একত্রে নির্দেশগুলো কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা টহল জোরদার করবে এবং যারা এই নির্দেশাবলী লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি
রবিবার সকাল পর্যন্ত দেশে নতুন করে কোভিড-১৯ এ ৭ হাজার ৮৭ জন আক্রান্ত হয় যা গত বছরের মার্চ মাসের পর সর্বোচ্চ।
এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬৪ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া, ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় ৫৩ জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে করোনাভাইরাসে মোট মৃত্যু ৯ হাজার ২৬৬ জনে দাঁড়িয়েছে। শনিবারের ১.৪৬ শতাংশ থেকে রবিবার মৃত্যুর হার কমে দাঁড়িয়েছে ১.৪৫ শতাংশে।
আরও পড়ুন: হাসপাতালের শয্যা বাড়ানোর বিকল্প নেই: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জানুয়ারিতে মারা যায় ৫৬৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৮১ জন এবং মার্চে ৬৩৮ জন।
এই পরিস্থিতিতে সরকার ক্রমবর্ধমান রোগীদের সংখ্যা মোকাবেলায় কোভিড-মনোনীত হাসপাতাল এবং আইসিইউ বেডের সংখ্যা বাড়াচ্ছে।