প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে তেমন কেউ বের হচ্ছেন না। এমন মহামারি বিপদের মধ্যেও ভোর থেকে অনায়াসে মাটি আর পানি দিয়ে ইটভাটায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন শত শত শ্রমিক। নেই কোনো নিরাপত্তা, সাধারণত তারা মাস্কও ব্যবহার করছেন না।
নবীনগর উপজেলায় বেশ কয়েকটি ইটভাটা রয়েছে। করোনাভাইরাসের মহামারিকে উপেক্ষা করে ভাটার স্তুপ থেকে গোলানো মাটি নিচ্ছেন বেশ কিছু শ্রমিক। সেখান থেকে ট্রলি দিয়ে আবার ইট বানানোর লাইনে মাটি নিচ্ছেন কেউ কেউ। সেখানে ইট বানিয়ে যাচ্ছেন আরও কিছু শ্রমিক। এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে ইটভাটা শ্রমিকদের।
এসময় শ্রমিকেরা জানান, প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ইটভাটায় কাজ করতে হয়। আগুনে যারা কাজ করে তারা শিফট পরিবর্তন করে আসে।
করোনাভাইরাস সম্পর্কে জানতে চাইলে একজন শ্রমিক বলেন, ‘কাজ না করলে খাব কী? মালিক পক্ষের কাছ থেকে আমাদের ধার নেয়া। আমরা কাজ না করতে পারলে আমাদের ঘরের বাজার হবে না, আমার পরিবার না খেয়ে থাকবে। একদিন কাজে না আসলে ওইদিন আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।’
আরেক শ্রমিক বলেন, ‘শুনেছি দেশে নাকি কি রোগ এসেছে কিন্তু আমাদের তো আর কিছুই করার নেই, দুবেলা-দুমুঠো খাবার জোগাতে আমাদের কাজ করতেই হবে।’
‘সারা বছর এলাকাতে ভ্যান চালাই। কার্তিক মাস থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত ইটভাটায় কাজ করি,’ যোগ করেন তিনি।
উপজেলার কনিকারা গ্রামের সুমন ব্রিক্স ইটভাটার মিল সরদার প্রদীপ বর্মন জানান, প্রতিটি মিলে ৫০ জন করে শ্রমিক কাজ করেন। ভাটা থেকে গোলানো মাটি নিয়ে ইট বানানো পর্যন্ত তাদের কাজ। এদের অনেককেই কাজের আগে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। অনেককেই আবার সপ্তাহ শেষে বেতন দেয়া হয়। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ টাকার মতো বেতন আসে ইটভাটায় কর্মরত শ্রমিকদের। তবে যারা ইট বানান তাদের বেতনের চেয়ে একটু বেশি। দরিদ্রতার কারণে ইটভাটায় কাজ করেন এসব শ্রমিকেরা। সারা বছর রিকশা ভ্যান বা অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাওয়া এসব শ্রমিকেরা ইটভাটা থেকে আয়ও করেন বেশ ভালো।
করোনাভাইরাস বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘সরকার তো আমাদেরকে এখনও পর্যন্ত কোনো নোটিশ দেয়নি, আমাদের তো কোনো কাজ বন্ধ করতে বলা হয়নি। এছাড়া আমরা কাজ বন্ধ করতে পারছি না, আমরা কাজ বন্ধ করলে শ্রমিকরা কী খাবেন?’
নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাসুম বলেন, ‘বর্তমান অবস্থায় ইটভাটা চালু রাখা দণ্ডনীয় অপরাধ। খোঁজ খবর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’