শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অসুস্থতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে গেলে করোনার অজুহাতে চিকিৎসা সেবা দিলেও দিচ্ছে না ওষুধ।
শুধু রোগের বিস্তারিত শুনে চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন করে দেয় এবং বাহির থেকে সেগুলো কিনতে হয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, আবাসিক হল বন্ধ রেখে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণের রুটিন প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে পরীক্ষা দেয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরছেন। তবে আবাসিক হলগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা মেস ও বাসায় গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন। এতে অনেক শিক্ষার্থী জ্বরসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু সেবা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে গেলে ওষুধ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
আবাসিক হলগুলো বন্ধ থাকলে মেডিকেল কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতো শিক্ষার্থীদের জন্য ওষুধ সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। শুধু জরুরি রোগীদের যৎসামান্য ওষুধ দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: ইবি শিক্ষককে হত্যার হুমকির ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন
বঙ্গবন্ধুর নামে বানান ভুল: ইবি রেজিস্ট্রারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
শিক্ষককে হত্যার হুমকি: পদ হারালেন ইবির সহকারী প্রক্টর
এছাড়াও করোনাকালীন সময়ে মেডিকেল সেন্টারে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ডাক্তাররা দায়িত্ব পালন করেন। বাকি সময়টুকু ডাক্তার শূন্য থেকে যায় মেডিকেল। ফলে সন্ধ্যা হওয়ার পরেই বন্ধ হয়ে যায় মেডিকেল সেন্টারের গেট। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, গত ২০ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইফুল ইসলাম নামের মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থী প্রচণ্ড পেট ব্যথা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে যান। সেখানে গিয়ে ডাক্তার ও নার্সদের না পেয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের কাছে চিকিৎসা সেবা চান।
তখন দায়িত্বরত কর্মকর্তা কোভিডের কারণে শিক্ষার্থীদের কোনো সেবা চালু নেই বলে জানান। ফলে সেবা না পেয়ে ওই শিক্ষার্থী মেসে ফিরে যান। পরে রাত ১২টার দিকে ওই শিক্ষার্থী আরও অসুস্থ হয়ে গেলে তার সহপাঠীরা তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নেয়ার জন্য কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স সেবা চায়। কিন্তু ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও মেডিকেল কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেয়নি বলে দাবি করেছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
এমতাবস্থায় ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা ৯৯৯ ফোন করে অ্যাম্বুলেন্স সেবা চায়। আধাঘণ্টা অপেক্ষা করার পর ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী হরিনারায়নপুর থেকে ৯৯৯ এর একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ওই শিক্ষার্থীকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা ক্যাম্পাস গেটে জড় হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তারা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে আমরা যদি কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাই তাহলে কে পাবে? অচিরেই মেডিকেল সেন্টারে আমরা পূণার্ঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা চাই। শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সেবা ঠিকই চালু রয়েছে। কিন্তু আমাদের সেবা চালু নেই। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় বিষয়।’
এছাড়াও বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন: সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্তে ইবি শিক্ষকদের অসন্তোষ
বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি ফেলোশিপ পেলেন ইবির ২৬ শিক্ষক
করোনার ছুটির মধ্যে পরীক্ষা নেবে ইবি
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে ঠিকই কিন্তু সেবার ব্যবস্থা করেনি। প্রয়োজন ছিল করোনাকালে আগে সেবা তারপর পরীক্ষার। আমার সাথে যে বিষয়টি ঘটেছে তা অবর্ণনীয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান বলেন, ‘পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে আমরা প্রশাসনের সাথে অনানুষ্ঠানিকভাবে বসেছিলাম। তখন পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষার্থীদের থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থা করেই পরীক্ষা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল প্রশাসন। আমি কিছুদিন অসুস্থ থাকায় এ বিষয়ে খোঁজ খবর রাখতে পারিনি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমার ফোন বন্ধ ছিল না। অনেক রাত হওয়ায় আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তাদের সাথে ১২টা পর্যন্ত কথা হয়েছিল।’
মেডিকের সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সেবার বিষয়টি মাথায় রেখে আমি নভেম্বর মাসে ২৪ ঘণ্টা ডাক্তার রাখার নির্দেশনা চেয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ গাড়ি সার্ভিস না দেয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি। আর হল বন্ধ থাকলে ওষুধ সেবা দেয়া হয় না। শুধু ইমারজেন্সি রোগীদের ওষুধ সেবা দেয়া হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা সেবা পাবে না এটা মানা যায় না। শিক্ষার্থীদের সেবার জন্যই এই মেডিকেল। শিক্ষার্থীরা সেবা না পেলে এই মেডিকেল রেখে লাভ কী? এ ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান মেডিকেল অফিসারকে শনিবারের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। আমি শনিবার ক্যাম্পাসে এসে বিষয়টি দেখব।’