স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক দুর্নীতি এবং করোনা চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা নিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। শনিবার সংসদ অধিবেশনে এ সময় তাকে ‘নির্লজ্জ’ আখ্যা দিয়ে দ্রুত তাঁর পদত্যাগের দাবি জানান তাঁরা। সাতক্ষীরা ও বগুড়া জেলায় অক্সিজেনের অভাবে রোগীদের মৃত্যুর জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ব্যর্থতাকে দায়ী করে তাঁরা তাঁর তীব্র সমালোচনা করেন।
শনিবার সংসদ অধিবেশনের সমাপনী দিনে এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন না। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
বগুড়া-৬ আসনের বিএনপির সংসদ সদস্য গুলাম মোহাম্মদ সিরাজ বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রথমে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে এই আলোচনা সূত্রপাত ঘটান।
আরও পড়ুন: গ্রাহক প্রতারণা: স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বোনসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা
তিনি অভিযোগ করেন, গত দুই দিনে বগুড়ায় অক্সিজেনের অভাবে ২৪ জন করোনা রোগী মারা গেছেন। বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল করোনা চিকিৎসার জন্য একটি ডেডিকেটেড হাসপাতাল। তবে সেখানে কেবল আটটি আইসিইউ শয্যা রয়েছে এবং মাত্র দুটি হাই-ফ্লো নজেল ক্যানোলা রয়েছে। এ কারণে আইসিইউর বাকি শয্যাগুলি কোন কাজে আসে না।
তিনি আরও বলেন, বগুড়ার তিনটি হাসপাতালে ৪৫০ শয্যা করোনা রোগী দিয়ে ভর্তি। সেখানে আর নতুন রোগী ভর্তি করানোর কোন সুযোগ নেয়।
আরও পড়ুন: হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট নেই: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা জিএম কাদের তার সমাপনী বক্তব্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়সহ স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক অব্যবস্থাপনার সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বছর আগে যেখানে ছিল এখনও সেখানেই রয়েছে। কোন উন্নতি হয়নি।
জাপা প্রধান পুনরায় উল্লেখ করে বলেন, তিনি তাঁর নির্বাচনকেন্দ্রগুলির হাসপাতালে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অনেক চিঠি লিখেছেন।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর কোনও দেশই স্বাস্থ্যখাতকে গুরুত্ব দেয়নি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
কাদের আরও বলেন, তিনি হাসপাতালগুলির বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে সংসদে অনেকবার বলেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে কখনো মনোযোগ দেননি বলে কিছুই হয়নি।
কাদের বলেন, আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ছয় থেকে সাতবার ফোন দিয়েছি। কিন্তু মন্ত্রী আমার চিঠিগুলির যেমন উত্তর দেননি, তেমনি ফোনও ধরেননি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ -৩ আসনের বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, বুধবার সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন তাতে তিনি পুরো সংসদকে অপমান করেছেন।
আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জে করোনার টিকা তৈরি হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
তিনি বলেন, সংসদে মন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, সংসদ সদস্যরা জেলা হাসপাতালগুলির সভাপতি। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেন না। মন্ত্রীর এই বক্তব্য সঠিক নয়। এই বিবৃতি সংসদের কার্যক্রম থেকে বাদ দেয়া উচিত।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দ্রুত পদত্যাগের দাবি জানান। তিনি বলেন, তিনি (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) কোন ধরণের মানুষ? তার কি কোনও লজ্জা নেই? কি ঘটছে তা দেখার জন্য তিনি কখনও কোনও হাসপাতালে যাননি? তিনি শুধু জুমে মিটিং করেন!
মুজিবুল হক বলেন, মন্ত্রী বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতিকে আমেরিকার সাথে তুলনা করেছেন। মন্ত্রী বলেন, আমেরিকার চেয়ে কম মানুষ বাংলাদেশে মারা গেছে। এটি কি তার কৃতিত্ব? গত এক বছরে মন্ত্রী কী করেছেন? তিনটি জেলায় কোনও অক্সিজেন নেই। অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে।
ঢাকা-৬ আসনের আরেক জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, সাতক্ষীরায় অক্সিজেনের অভাবে এক ঘণ্টার মধ্যে সাতজন মারা গেছে। নার্স, ওয়ার্ড বয় ও চিকিৎসকরা কী করেছে?
তিনি দাবি করেন, যখন কোন রোগী আইসিইউতে ভর্তি হন তখন সেখানে কী ঘটে তা ঠিক কেউ জানেন না। মানুষের জীবনের কি কোনও মূল্য নেই?
তিনি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানান।
আরও পড়ুন: মার্চের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষ টিকা পাবে: সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী
মাস্ক কেনার ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিষয়ে সংসদ সদস্যদের অভিযোগের পরে পিরোজপুর -৩ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তুম আলী ফারাজি বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বুধবার দাবি করেছেন এখনও পর্যন্ত কোনও মাস্ক কেনা হয়নি।
তবে স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে বলেছেন, একটি সার্জিকেল মাস্ক ৩৫০ টাকায় কেনা হয়েছে। কেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাদের কাছে এই ঘটনাগুলি আড়াল করছেন?
বিরোধী সংসদ সদস্যরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে এসব কথা বলার সময় ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যদের চুপ করে থাকতে দেখা গেছে।