আর কিছুদিন পরেই কোরবানির ঈদ। এ সময় কোভিড সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে কোরবানির সময় সতর্কতা মেনে চলতে হবে। এ রকম একটা উৎসবে অনেক মানুষের সমাগম থাকাটা স্বাভাবিক। তাছাড়া পশু কোরবানির আগে ও পরে সৃষ্ট ময়লা-আবর্জনা থেকে জীবাণু ছড়াতে পারে। তাই চলুন, কোভিড সংক্রমণ এড়াতে কোরবানির সময় সতর্কতার জন্য জরুরি পদক্ষেপগুলোর ব্যাপারে জেনে নেই।
কোভিড সংক্রমণ এড়াতে কোরবানির সময় সতর্কতা-
কোরবানির জন্য সঠিক স্থান নির্বাচন করুন
পশু কোরবানির স্থানটি বসতবাড়ি থেকে একটু দূরে এবং খোলামেলা হওয়া দরকার। যে স্থানটি নির্বাচন করবেন, সেটি অবশ্যই আগে থেকে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করে রাখবেন। এতে এলাকা জুড়ে জীবাণু ছড়ানোর সম্ভাবনা কম থাকে এবং পরিবেশ দূষণ রোধ হয়। তাছাড়া কোরবানি পরবর্তী প্রয়োজনীয় ময়লা নিষ্কাশনেও বেশ সুবিধা হয়। কোরবানির সকল কার্যক্রম শেষ হয়ে গেলে পুরো জায়গাটি স্যাভলন মেশানো পানি অথবা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে স্যানিটাইজ্ড করে নিন।
আরও পড়ুন: কোরবানির পশু নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছেড়েছে ‘ক্যাটল স্পেশাল’ ট্রেন
কসাই-কোরবানির সরঞ্জাম স্বাস্থ্যবিধির আওতায় আনুন
কসাইদের কাজ শুরুর আগে দেখে নিন তারা হ্যান্ড-গ্লাভস, মাস্ক এবং জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা রাবারের জুতা পরছে কিনা। তাদের সাথে যারা কোরবানিতে অংশ নিবেন ও মাংস কাটবেন তাদের ক্ষেত্রেও এই সতর্কতা প্রযোজ্য। পশু ধরার আগে ও পুরো কাজ হওয়ার পর সাবান ও হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করে নিন। পশু কোরবানির প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আগে থেকেই স্যানিটাইজ্ড করে রাখুন। যে পাত্রে মাংস রাখাবেন তা আগে থেকেই সাবান-পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে রাখুন। মাংস কাটার সময় নিজেদের মধ্যে তিন ফুট দূরত্ব রেখে বসুন।
পশু কোরবানি ও চামড়া ছাড়ানোর সময় কোন অবস্থাতেই হাঁচি-কাশি দেয়া যাবে না। মাংস আলাদা করে যেখানে রাখা হবে তার আশপাশেও হাঁচি-কাশি দেয়া থেকে বিরত থাকুন। শুধু কোরবানির সাথে সম্পৃক্তরা ছাড়া অন্য কাউকে আশেপাশে ভীড়তে দেবেন না। আর কেউ এলেও তাকে অবশ্যই কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব রেখে দাড়াতে হবে।
আরও পড়ুন: কোরবানির হাটে মহিষের আক্রমণে কিশোরের মৃত্যু
একটি নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির পশুর বর্জ্যগুলো ফেলুন
গ্রামাঞ্চলে কোরবানির আগে থেকেই খোলা মাঠে বা কোন পরিত্যক্ত স্থানে গর্ত করে রাখতে পারেন। আর শহরের ক্ষেত্রে কাছাকাছি একটি ডাস্টবিন ঠিক করে রাখুন। ডাস্টবিনটি রাস্তার কাছাকাছি হলে বর্জ্যের গাড়ি পৌঁছাতে সুবিধা হবে। আর গোলির ভেতরে হলে বর্জ্য একটি ব্যাগে ভরে নির্দিষ্ট স্থানে রাখুন। খেয়াল রাখবেন- কুরবানির পশুর গোবর ও অন্যান্য আবর্জনা যেন ড্রেনে ফেলা না হয়। এক্ষেত্রে ড্রেন বন্ধ হয়ে ময়লা উপচে পড়বে।
আগে থেকে ঠিক করা জায়গায় মাংস কাটার কাজ শেষ করুন। এ সময় উচ্ছিষ্টগুলো ছিটিয়ে না ফেলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখুন। অতঃপর সব উচ্ছিষ্ট একসাথে করে পূর্ব নির্ধারিত ডাস্টবিনে ফেলুন। গ্রামাঞ্চলে গর্তে রেখে মাটি চাপা দিয়ে রাখতে পারেন। দ্রুত বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য স্থানীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির দৃষ্টি আকর্ষণ করুন।
আরও পড়ুন: কোরবানির পশুর চামড়ার দাম বাড়ালো সরকার
যত দ্রুত সম্ভব চামড়া ব্যবস্থাপনার কাজ শেষ করুন
চামড়া ছাড়ানো হয়ে গেলে সাথে সাথে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করার ব্যবস্থা করুন। এছাড়া মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডিং, মসজিদ বা এতিমখানায়ও দান করে দিতে পারেন।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল কোরবানির পশুর হাটের উদ্বোধন
মাংস সংরক্ষণে করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন
মাংস বাড়িতে নেয়ার আগে থেকেই হাত, রান্নাঘর বিশেষ করে মাংস রাখার পাত্রগুলো সাবান ও হালকা গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। মাংস এমনভাবে রান্না করুন, যেন মাংসের প্রতিটি অংশ বেশ ভালোভাবে সেদ্ধ হয়। রান্নার কাজ শেষ হলে কাঁচা মাংসের সংস্পর্শে আসা সব কিছু আগের মত করে হালকা গরম পানি ও সাবান দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। রেফ্রিজারেটরে কাঁচা মাংস রাখার সময় ছোট ছোট প্যাকেটে মুখ বন্ধ করে মাংস রাখুন। রেফ্রিজারেটর থেকে মাংস বের করে রান্নার পূর্বে ভালো করে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
আরও পড়ুন: দেশের বাইরে থেকে কোরবানির পশু আসতে দেওয়া হবে না: প্রাণিসম্পদমন্ত্রী
শেষাংশ
যেহেতু করোনা মহামারি চলাকালীন দ্বিতীয়বারের মত ঈদুল আজহা পালিত হতে যাচ্ছে, তাই কোরবানি পরবর্তী সতর্কতা মেনে চলার উপর আরো বেশি জোর দিতে হবে। এর ফলশ্রুতিতে আপনি নিজে সুস্থ থাকার পাশাপাশি আপনার পাশের জনকেও কোভিড সংক্রমণ থেকে মুক্ত রাখতে পারবেন।