দেশে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসে ৮ হাজার ৮২২ জন আক্রান্ত হয়েছেন, যা দেশে প্রথম করোনা ধরা পড়ার পর একদিনে সর্বোচ্চ। এর আগে সোমবার একদিনে ৮ হাজার ৩৬৪ জনের করোনা শনাক্ত ছিল আগের সর্বোচ্চ।
এছাড়া একদিনে আরও ১১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৫০৩ জনে।
এর আগে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ৭ হাজার ৬৬৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৫ হাজার ১০৫টি। মৃতদের মধ্যে ৭২ জন পুরুষ এবং ৪৩ জন নারী।
আরও পড়ুন: ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ নিয়ে মাঠে নামছে সেনাবাহিনী
নতুন করে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৫৫০ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ১৬ হাজার ২৫০ জন। সুস্থতার হার ৮৯.৩৮ শতাংশ। মৃত্যুর হার ১.৫৯ শতাংশ।
কঠোর লকডাউনে ২১ দফা নির্দেশনা, থাকছে সেনাবাহিনী
দেশে করোনাভাইরাস জনিত কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে গেছে। এই অবস্থায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং মানুষের জীবন বাঁচানোর লক্ষ্যে আগামী বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার।
সাত দিনের প্রাথমিক কঠোর লকডাউন পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত করতে, বুধবার ২১ দফা নির্দেশনাসহ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি অফিসসমূহ বন্ধ থাকবে। তবে, আদালত সমূহের ব্যাপারে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালানার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।
আরও পড়ুন: অকারণে বের হলে গ্রেপ্তার, ডিএমপি কমিশনারের হুঁশিয়ারি
এদিকে অভ্যন্তরীণ সকল প্রকার যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল বন্ধের পাশাপাশি, শপিংমল/মার্কেটসহ দোকানপাট, সকল প্রকার বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। এর পাশাপাশি সকল প্রকার জনসমাবেশ ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জরুরি পরিষেবা, যেমন কৃষি পণ্য, খাদ্যশস্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, করোনা টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সংশ্লিষ্ট কাজ, বিদ্যুৎ,পানি, গ্যাস, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন, ইন্টারনেট, সকল গণমাধ্যম, বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি পণ্য ও সেবার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অধীনে নিয়োজিত ব্যক্তি ও যানবাহন পরিচয়পত্র প্রদর্শনপূর্বক যাতায়াত করতে পারবে।
পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত সকল পরিবহন, সকল বন্দর (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল), শিল্প-কলকারখান এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
এছাড়া, কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯ট থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। করোনার টিকা গ্রহণ, হোটেল-রেস্তোরা থেকে খাবার ক্রয় এবং বিদেশ যাত্রায় বাঁধা থাকছে না।
বিশ্ব পরিস্থিতি:
মহামারি করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত ও মৃত্যু অব্যাহত রয়েছে। টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করা হলেও, বেশকিছু দেশে তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা ৩৯ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৯ জন।
এছাড়া একই সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার ৪২২ জনে দাঁড়িয়েছে।
এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট ৩০০ কোটি ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৪৭ ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে।
করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ আমেরিকায় এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৫১ হাজার ৮৭০ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৬ লাখ ৪ হাজার ৪৫৭ জন।
আরও পড়ুন: চীন থেকে শিগগিরই আরও ২০ লাখ টিকা আসছে
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১৫ হাজার ৯৮৫ জনে। দেশটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১ কোটি ৮৫ লাখ ১৩ হাজার ৩০৫ জন। মৃত্যুর দিক দিয়ে দেশটির অবস্থান দ্বিতীয়।
এদিকে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি ৯৭ লাখ ৬৩৭ জন। একই সময়ে মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৭ জনে।