বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমান পলাতক কি না এবং তাদের পক্ষে আইনজীবী লড়তে পারবেন কি না-এমন প্রশ্নে হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত জানা যাবে আগামী ২৬ জুন।
সোমবার তৃতীয় দিনের মতো শুনানি শেষে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ রায়ের ওই দিন ধার্য করেন।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও হিসাববিবরণীতে সম্পদ গোপন করার অভিযোগে করা মামলা দায়ের ও এর প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে তারেক ও তার স্ত্রী জোবাইদা ১৫ বছর আগে হাইকোর্টে পৃথক তিনটি রিট করেন। তখন হাইকোর্ট রুল দিয়েছিলেন। রুল শুনানির জন্য তারেক রহমানের করা দুটি রিট ও জোবাইদা রহমানের করা একটি রিট গত ২৯ মে হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ওঠে।
সেদিন পলাতক তারেক রহমানের পক্ষে আইনজীবী সময়ের আরজি জানাতে পারেন কি না-তা নিয়ে প্রশ্ন রাখেন দুদকের আইনজীবী। এরপর ৫ জুন তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমান পলাতক কি না এবং তাদের পক্ষে আইনজীবী লড়তে পারবেন কি না-এমন প্রশ্নে শুনানি হয়। এরপর ১২ জুন ও আজ (১৯ জুন) শুনানি হয়।
আদালতে তারেক-জোবাইদার রিটের বিষয়ে শুনানি করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদীন। তাদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কায়সার কামাল। দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন শুনানিতে অংশ নেন।
শুনানিতে অংশ নিয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, তিনটি মামলায় তারেক রহমান দণ্ডিত হয়েছেন। তার সাজাপরোয়ানা এখনো ঝুলছে। যদি তিনি দণ্ডিত না হতেন আর মামলাগুলোর বিচার শেষ না হতো, তাহলে ভিন্ন কথা। তারেক রহমান এ মামলায় পলাতক। একই মামলা বাতিল চেয়ে জোবাইদা রহমানের করা আবেদনের ওপর সর্বশেষ আপিল বিভাগ গত ১৩ এপ্রিল রায় দেন। এই রায়ে আপিল বিভাগ বলে দিয়েছেন, জোবাইদা রহমান পলাতক। পলাতক বলে তাদের পক্ষে আইনজীবী শুনানি করতে পারেন না।
পড়ুন: তারেক-জোবায়দার দুর্নীতি মামলার রুল শুনানি ৫ জুন
অন্যদিকে, তারেক ও জোবায়দার বিষয়ে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘মামলাটি ভ্রূণ অবস্থায়। এখনো অভিযোগ আমলে নেয়া হয়নি। তাই আত্মসমর্পণ করার পর্যায়ে আসেনি। জোবাইদা রহমানের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করা হবে, তাই এ বিষয় নিয়ে বলছি না। তবে তারেক রহমান যখন রিট করেন, তখন তিনি পলাতক ছিলেন না। কোনো মামলায় কেউ দণ্ডিত হলে বিচারাধীন অপর মামলায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে পলাতক হয়ে যাবেন-এমন নজির দেখছি না। তারেক রহমান এ মামলায় জামিন পেয়েছেন, যা আপিল বিভাগ বহাল রেখেছেন। তাই এ মামলায় তাকে পলাতক বলা যাবে না।’
এর আগে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আপিল বিভাগ রায়ে বলে দিয়েছেন, জোবায়দা রহমান পলাতক। এ মামলায় পলাতক হিসেবে বিবেচিত হবেন। ওই মামলা বাতিল আবেদনে ২০০৮ সালের ৭ এপ্রিল জোবায়দা হাইকোর্টে হাজির হন। পরদিন হাইকোর্ট রুল ও স্থগিতাদেশ দেন। এমন চর্চা করা যাবে না বলে রায়ে বলেছেন আপিল বিভাগ।
একই মামলা নিয়ে রিট ও বাতিল আবেদন করা যাবে না। আট সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের অংশবিশেষ বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের রায়ের রিভিউ চাইতে হলে তাকে (জোবাইদা) আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। এ অবস্থায় আপিল বিভাগের রায় কার্যকর থাকবে। রিট ও বাতিল আবেদনের পরিণতি একই হবে। আপিল বিভাগের অভিমত অনুসারে পলাতক জোবাইদার পক্ষে আইনজীবী লড়তে পারবেন না।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন শুনানিতে বলেন, এ মামলায় তারেক রহমানকে ২০০৭ সালের ৩১ অক্টোবর গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর হয়। রিট দুটির একটিতে লেটার অব অথরিটি (ক্ষমতা অর্পণপত্র) দেয়া হয়েছে ২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এবং অন্যটিতে ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর, অর্থাৎ গ্রেপ্তার দেখানোর আগে। এখন তিনি পলাতক।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা দায়ের করে দুদক। মামলায় তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। পরে মামলার কার্যক্রম চ্যালেঞ্জ করে তারেক ও জোবাইদা এবং সম্পদের হিসাব চেয়ে দেয়া নোটিশ চ্যালেঞ্জ করে তারেক রহমান একটি রিট করেন।
পড়ুন: ১৫ বছর পর তারেক-জোবায়দার রিট মামলা চূড়ান্ত শুনানির দিন ধার্য