নির্বাচন কমিশন ( ইসি) গঠনে বিএনপিকে রাষ্ট্রপতির সংলাপে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, ‘আমি বিএনপির উদ্দেশ্যে এই কথাই বলতে চাই যে দেখেন দেশ হচ্ছে সবার ঊর্ধ্বে, দেশের স্বার্থে আপনারা যদি এই সংলাপে আসেন, সেটা আপনাদের জন্য ভালো হবে, সকলের জন্য ভালো হবে। সেটা যদি না করেন, সেটা অপনাদের সিদ্ধান্ত।
রবিবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে রবিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনের গঠনে আইনের সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে এ সময় আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এই সময়ের মধ্যে আইন করার সুযোগ নেই। আইন হবে না এই কথা তো আমি বলিনি। আমি বলেছি, এই আইনটা হবে। এই আইনটা এমন একটা আইন হওয়া উচিত। যেটা গ্রহণযোগ্য হবে সকলের কাছে। শুধু এক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হলে তো এটা সার্বজনীন আইন হলো না। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি, এটা আইন হবে। কিন্তু এই যে কমিশন তা সংলাপের উপর নির্ভর করবে। দেখা যাক কী হয় ।’
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপ কাজে আসবে না বলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খানের মন্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এই ব্যাপারে দুটো কথা বলব। একটা হচ্ছে যে, বাংলাদেশে বাক স্বাধীনতা আছে, বাংলাদেশের যে কোন নাগরিক তার অভিমত ব্যক্ত করতে পারেন। আমার মনে হয় তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি এটা করতেই পারেন।’
আরও পড়ুন: সরকার আইনের বাইরে কোনো কাজ করতে পারে না: আইনমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘আর আমি আপনাদের বলব এই সংলাপ ব্যর্থ হচ্ছে না, সফল হচ্ছে, এই সংলাপ শেষ হওয়ার পর মহামান্য রাষ্ট্রপতি কী পদক্ষেপ নেন সেটা দেখার পর আপনারা বুঝবেন। সেই পর্যন্ত আপনাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘অনেকে বলেন টক্সিক সিচুয়েশন, এই টক্সিক সিচুয়েশন ওনারা যদি মনে করেন, এটা টক্সিক সিচুয়েশন, তাহলে ওনাদের আমার মনে হয় টক্সিক সিচুয়েশন থেকে বেরুনোর জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। সংলাপে গেলে আমার মনে হয় সেটা পজিটিভ হবে।’
চলমান মামলার জটের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘মামলার জট বেড়েছে। করোনার কারণে আরও বাড়ার কথা ছিল। কিন্তু ভার্চুয়্যাল কোর্ট আইন করে দুই লাখ মামলা নিষ্পত্তি করতে পেরেছি। এই আইন না করলে এই দুই লাখ মামলা যুক্ত হত। এখন যেসব মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে সেটাই আছে। আমরা কিছুটা হলেও কমাতে পেরেছি,’ যোগ করেন তিনি।’
নতুন বছরে সরকারের জন্য কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কিনা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হয় চ্যালেঞ্জগুলো আগেই করে ফেলেছিলাম। চ্যালেঞ্জ ডেলিভারির সময় হয়ে গেছে। পদ্মা সেতু প্রায় কমপ্লিট। যেসব মেগা প্রজেক্ট নেয়া হয়েছিল সবগুলো ডিসেম্বর বা জুনের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে। মেগা চ্যালেঞ্জ যেগুলো সেগুলো তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সারকার ডেলিভারি করার জন্য প্রস্তুত।’
আরও পড়ুন: ইসি গঠনে দ্রুত আইন প্রণয়নের প্রস্তাব নাকচ আইনমন্ত্রীর
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে সব সময় যেটা চ্যালেঞ্জ আমরা জনসেবায় বিশ্বাস করি। সেবার মান উন্নয়ন ও সেবা জনগণকে পৌঁছে দেয়াটাই আমাদের কাজ এবং সেই কাজ করাটাকেই আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করি। আমাদের সব প্রোগ্রামই জনবান্ধব। জনবান্ধব প্রোগ্রামগুলো যাতে জনসেবা করে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া যায় সেটাই আমরা চেষ্টা করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘কাকে বিদেশ পাঠানো হবে, কাকে বিদেশ পাঠানো হবে না দ্যাট ইজ নট দ্য প্রায়োরিটি। প্রায়োরিটি হচ্ছে যে সেবাগুলো জনগণের অনেক আগে পাওয়া উচিত ছিল সেই সেবাগুলো দেয়ার জন্য শেখ হাসিনা ক্ষেত্র প্রস্তুত করে আজ পৌঁছে দেয়ার মত সময় এসেছে, আমরা পৌঁছে দেব। ’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সত্যিকারে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ভিশন অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের দেশ উন্নত দেশ হবে, সেই উন্নত দেশ করার জন্য যা যা করার সেগুলো আমরা করতে প্রস্তুত হব, চালিয়ে যাচ্ছি, সেসব করার জন্য আরও জোরালোভাবে এগুতে হবে সেগুলো আমরা গ্রহণ করব। আমার মনে হয় পাঁচ বছর পূর্ণ হলে যে নির্বাচন হবে সে নির্বাচনে অবশ্যই জনগণ এটা বুঝবে যে কারা তাদেরকে সেবা করেছে আর কারা নিজেদেরকে সেবা করার জন্য বক্তব্য দিয়েছে। আমার মনে হয় না সেখানে জনগণ ভুল করবে।’