দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর নির্বাহী আদেশে ৯০ দিনের জন্য বিশ্বের সব দেশে মার্কিন সহায়তা স্থগিত করলেও ইউএসএইডের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান আজ (রবিবার) মার্কিন দূতাবাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ইউএসএইডের পুষ্টি সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকার বিষয়টি সেখানে উঠে আসে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয়দের জন্য পুষ্টি সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা—ইউএসএইড। খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদানে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে থাকে এই সংস্থটি।
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২৪০ কোটি ডলার দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার, যার মধ্যে বাংলাদেশই পেয়েছে প্রায় ২০০ কোটি ডলার।
আরও পড়ুন: পরিবেশগত সহযোগিতা জোরদারে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠক
এর আগে, সব দেশকে দেওয়া মার্কিন সহায়তা স্থগিত করে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য ৯০ দিন সময় দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন, তবে ঠিক কোন কোন দেশ এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ছে না—সে বিষয়ে কিছু স্পষ্ট করা হয়নি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সেখানে কোনো দেশ নির্দিষ্ট করা হয়নি।’
তবে মার্কিন প্রশাসনের ওই আদেশ জারির পর বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যম শুধু ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি ব্যবহার করে সংবাদ প্রকাশ করেছে, যা পাঠককে বিভ্রান্ত করতে পারে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
বিভ্রান্তি এড়াতে এ ধরনের সংবাদ প্রকাশে গণমাধ্যমের কাছ থেকে সরকার আরও স্পষ্টতা প্রত্যাশা করে বলে জানানো হয়েছে।
গত ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশিত ওই আদেশে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচির দায়িত্বে থাকা সমস্ত বিভাগ ও সংস্থার প্রধানরা এই আদেশ প্রাপ্তির ৯০ দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচিগুলো পর্যালোচনার জন্য অন্যান্য দেশ ও বাস্তবায়নকারী বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং ঠিকাদারদের নতুন করে উন্নয়ন সহায়তা তহবিল বিতরণ স্থগিত রাখবে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাল বাংলাদেশ
প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশের পর বিশ্বব্যাপী সব বাস্তবায়নকারী অংশীদারদের ‘তাৎক্ষণিক সহায়তা কার্যক্রম বন্ধের আদেশ’ জারি করে ইউএসএইড।
বাংলাদেশেও ওই আদেশ পৌঁছেছে বলে ইউএনবিকে জানিয়েছেন ইউএসএইডের কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী সংস্থা কেয়ার বাংলাদেশের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে সংস্থাটির কমিউনিকেশনস ডিরেক্টর টনি মাইকেল গোমেজ বলেন, ‘গত ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পরপরই আমরা এ ধরনের একটি চিঠি পাই।’
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনা ও বাজেট অফিস (ওএমবি) বণ্টন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এই স্থগিতাদেশ কার্যকর করবে। ওএমবি পরিচালকের সঙ্গে পরামর্শক্রমে ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মতিতে প্রাপ্ত সুপারিশের ভিত্তিতে প্রতিটি বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি অব্যাহত, সংশোধন কিংবা বন্ধ করা হবে কিনা—সে বিষয়ে আদেশের ৯০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন মার্কিন সরকারের দায়িত্বশীল বিভাগ ও সংস্থার প্রধানরা।
তবে পর্যালোচনা শেষ হওয়া সাপেক্ষে ৯০ দিনের সময়কাল শেষ হওয়ার আগেও বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের নতুন বাধ্যবাধকতা ও বিতরণ কার্যক্রম শুরু হতে পারে। সেক্ষেত্রে এই কার্যক্রম একইভাবে চলবে, নাকি সংশোধিত আকারে চালিয়ে যাওয়া হবে—মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মনোনীত ব্যক্তি ও ওএমবি পরিচালকের সঙ্গে পরামর্শক্রমে তা নির্ধারণ করা হবে। পরবর্তীতে নতুন কোনো সহায়তা তহবিলের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।
অবশ্য নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে এই স্থগিতাদেশ রদও করার ক্ষমতা রাখে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই ক্ষমতাবলে সহায়তা কর্মকাণ্ড স্থগিতের আদেশ থেকে অব্যাহতি পেয়েছে ইসরায়েল ও মিসর।