১২ বছর আগে ছোট ছোট দুয়েকটি সমিতি গঠনের মাধ্যমে টাঙ্গাইল জেলায় মাংস সমিতি উদ্যোগটির উদ্ভাবনা। ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে সারা বছর ধরে নিজেদের জমানো টাকায় পশু কিনে মাংস ভাগাভাগি করে নেন এই সমিতির সদস্যরা। গ্রামের কতক সীমিত আয়ের মানুষ একত্রিত হয়ে গঠন করেন এই সমিতি। উদ্দেশ্য- নিজেদের ঈদ উদযাপনে কিছুটা বাড়তি আনন্দ যোগ করা।
বিগত বছরগুলোতে উদ্দেশ্যটি যথাযথ ভাবেই সুনিশ্চিত করে আসছে এই সমিতি।
মাংস সমিতি থেকে সদস্যরা যে সুবিধা পাচ্ছেন
গ্রাম পর্যায়ে এ ধরণের ছোট ছোট সমিতির কারণে গ্রামবাসীদেরকে ঈদের সময় বাজার থেকে মাংস ক্রয় করতে হয় না। কোন কোন সমিতিতে সপ্তাহে আবার কোথাও প্রতি মাসে তারা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সমিতির ভারপ্রাপ্ত একজনের নিকট জমা করেন। অতঃপর বছর শেষে সবার জমানো টাকা থেকে একটি পশু কেনা হয়। তারপর সেই পশু জবাই দিয়ে সমিতির সদস্যদের মাঝে বন্টনের মাধ্যমে শেষ হয় এর কার্যক্রম। এ থেকে একটি পরিবারের জন্য যথেষ্ঠ মাংসের যোগান হয়, যা ঈদের বাজার থেকে কিনতে গেলে অনেক বেশী খরচ হোতো।
আরও পড়ুন: খুলনা বিভাগে ঈদের পরে বেড়েছে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত
সাধারণত ঈদের মৌসুমে নতুন জামা-কাপড়, সেমাই সহ নিত্য খাবার কেনার পর খেটে খাওয়া মানুষগুলোর মাংস কেনার অবস্থা থাকে না। মাংস সমিতি করার ফলে তারা প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে ঈদের সময় ৬ থেকে ৮ কেজি মাংস পাচ্ছেন। এই পরিমাণের মধ্যে নিজেরা আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে খাওয়ার পরেও অতিথিদেরকে আপ্যায়ন করাতে পারছেন।
প্রতি মাসের রোজগার থেকে কিছু টাকা আলাদা করে সমিতিতে জমা করতে তাদের কষ্ট কম হয়। উপরন্তু ঈদের আগের দিন সবাই মিলে নিজেদের পছন্দ মত পশু কিনতে পারেন।
পুরুষদের পাশাপাশি এ ধরণের সমিতিগুলোতে মহিলারাও অংশ নিচ্ছেন। ফলশ্রুতিতে ঈদের সময় পরিবারগুলো মুক্তি পাচ্ছে আর্থিক চাপ থেকে। সংসারের খরচে বজায় থাকছে সমতা। আর মাংসের চাহিদা পূরণের সাথে সাথে আত্মীয়স্বজন নিয়ে ঈদ পালনে যুক্ত হচ্ছে বাড়তি আনন্দ।
দেশ জুড়ে মাংস সমিতির জনপ্রিয়তা
প্রথম দিকে দুয়েকটি করে শুরু হলেও এখন এ ধরণের সমিতির সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। কসাই ও পেশাদার মাংস বিক্রেতাদের মাধ্যমে সূত্রপাত ঘটলেও এখন সব ধরণের পেশাজীবী মানুষেরা মাংস সমিতি গঠন করছেন। শুধু তাই নয়, স্বল্প আয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গন্ডি পেরিয়ে এ ধরণের সমিতি এখন ছড়িয়ে পড়েছে শহরাঞ্চলের স্বচ্ছল মহলগুলোতেও।
আরও পড়ুন: করোনার চেয়ে শক্তিশালী ঈদযাত্রায় সড়কে ঝরলো ৩২৩ প্রাণ
রাজশাহীর বাঘা, টাঙ্গাইলের সখীপুর, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার পৌরসভাগুলোতে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে মাংস সমিতির কার্যক্রম। প্রথম দিকে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য নিয়ে গড়ে উঠতো এ ধরণের সমিতি। কিন্তু এখন তা বেড়ে দাড়িয়েছে ৫০ থেকে ৬০ জন। এমনকি এখনো প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে সদস্য সংখ্যা।
রাজশাহীর কুশাবাড়িয়া, হামিদকুড়া, জতরঘু, গোচর; শুধু এই চার গ্রামেই মাংস সমিতির সংখ্যা ৫০ এর বেশী। ঈদের আগের দিন এখানে জবাই হয় ৩৮ টি গরু ও দুই শতাধিক ছাগল। টাঙ্গাইলের সখীপুর পৌরসভায় চলতি বছর মাংস সমিতির সংখ্যা হাজার খানেক ছাড়িয়েছে। নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজারে ৩১৬ টি গ্রামে সমিতি সংখ্যা দাড়িয়েছে সর্বমোট এক হাজারেরও বেশী।
আরও পড়ুন: ঈদে করোনামুক্তি ও ফিলিস্তিনে শান্তির জন্য তথ্যমন্ত্রীর প্রার্থনা
এলাকাগুলোতে ধনী গরিব নির্বিশেষে সবাই এখন এ সমিতির সদস্য। একসাথে অনেক লোকের অংশগ্রহণের দরুণ পশু কেনা থেকে শুরু করে ভাগ বাটোয়ারা সব কিছু সহজতর হয়। তাছাড়া এ ঐক্য ঈদের আনন্দ আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়।
পশু ভাগাভাগির পর পশুর চামড়া বিক্রির টাকা জমা হয় সমিতির ফান্ডে, যা পরবর্তীতে ব্যয় হয় সমিতির কার্যক্রম পরিচালনায়।
পরিশেষ
একের চেয়ে সমষ্টিগত প্রচেষ্টার সুফলের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই মাংস সমিতি। উদ্দেশ্য শুধু ঈদ আনন্দ হলেও এ কাজের মাধ্যমে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের একসাথে কাজ করার প্রবণতা, পুরণ হচ্ছে নিম্নবিত্তদের মাংসের চাহিদা এবং সংসারে বজায় থাকছে ভারসাম্য।