দেশে আন্তর্জাতিক ওই টেলিভিশনটির সম্প্রচার বন্ধের দাবিতে করা রিট আনেদনটি নিষ্পত্তি করে বুধবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন শুনানি করেন। অন্যদিকে বিটিআরসির পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই রাকিব। আরও সংযুক্ত ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন। তার সাথে ছিলেন ব্যারিস্টার ফারজানা শায়লা।
আরও পড়ুন: আল জাজিরার প্রতিবেদন সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: সেনাপ্রধান
হাইকোর্টের নির্দেশ পেলে আল জাজিরার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: তথ্যমন্ত্রী
এর আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এ রিটের ওপর অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের ছয়জন সিনিয়র আইনজীবী তাদের মতামত তুলে ধরেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের শুনানি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য করে আদালত।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ অ্যামিকাস কিউরি এ জে মোহাম্মদ আলী, কামালুল আলম, প্রবীর নিয়োগী, ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল, আব্দুল মতিন খসরু ও শাহদীন মালিক তাদের মতামত তুলে ধরে শুনানি শেষ করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট ভার্চুয়াল বেঞ্চ।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ এবং ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেনস’ প্রতিবেদনটি ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে সরানোর নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন এ রিট দায়ের করেন। রিটে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্য ও প্রযুক্তি সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
১০ ফেব্রুয়ারি রিটের শুনানিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালত বলেছিল, ‘বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এরই মধ্যে আল জাজিরার প্রতিবেদনটি দেখেছেন। বিটিআরসি এত দিন কী করল, তারা বন্ধ করল না কেন। আপত্তিকর কিছু সম্প্রচার বন্ধের বিটিআরসির ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কেন আদালতের কাঁধের ওপর বন্দুক রাখা হচ্ছে? এখন এগুলো বন্ধ করা আর না করা সমান।’
আরও পড়ুন: আল জাজিরার প্রতিবেদনে সরকার বিচলিত: বিএনপি
আল জাজিরা বন্ধ চেয়ে রিটের শুনানিতে ৬ অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ
দেশে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধে রিটের শুনানি পেছাল
এরপর দেশে কাতারভিত্তিক আল জাজিরা টেলিভিশন নেটওয়ার্কের সম্প্রচার বন্ধে ও ভিডিও সরাতে হাইকোর্ট কোনো আদেশ দিতে পারে কি না, রিট আবেদনটি গ্রহণযোগ্য কিনা সে বিষয়ে মতামত জানতে ছয়জন অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) নিয়োগ দেয় হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার ইউএনবিকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে নিয়ে আল জাজিরায় প্রচারিত কনটেন্ট সরানোর বিষয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) টেলিফোন ও ইমেইলের মাধ্যমে ফেসবুক ও ইউটিউব কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে। যেহেতু বিজ্ঞ হাইকোর্ট উক্ত কনটেন্ট সরানোর বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেছেন, তাই বিটিআরসি কনটেন্ট সরানোর বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
আল জাজিরায় গত ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সম্প্রচারিত হয়, যা ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। প্রতিবেদনে উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। সরকারিভাবে এ প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও এ প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে আল জাজিরা টিভি নেটওয়ার্কের ওই প্রতিবেদনটিকে অসত্য ও বানোয়াট বলে উল্লেখ করা হয়েছে।