বাসে হাফ ভাড়ার দাবিতে রাস্তা অবরোধ বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। যদিও শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শুধু ঢাকা মহানগরীতে হাফ ভাড়া কার্যকরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাস মালিক সমিতি। তবে সারাদেশে সব গণপরিবহনে হাফ ভাড়ার দাবি মানা না পর্যন্ত আন্দোলন করে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
এই অচলাবস্থা শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থায় আরও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছে যার ফলে যাত্রীদের ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সরকার ৩ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়েছে। অন্যদিকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের পর ৭ নভেম্বর বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) আন্তনগর ও আন্তজেলা বাসের ভাড়া যথাক্রমে ২৬.৫ শতাংশ ও ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকরের সিদ্ধান্ত: ওবায়দুল কাদের
তবে পরিবহন শ্রমিকরা এই নির্ধারিত হারের বাইরে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া এই অনিয়মের প্রতিবাদকারী যাত্রীরা পরিবহন শ্রমিকদের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছেন, এমনকি একজন ছাত্রীকে ধর্ষণের হুমকিও দেয়া হয়েছে।
২০ নভেম্বর বদরুন্নেসা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী অর্ধেক বাস ভাড়া দিতে চাইলে ঠিকানা পরিবহনের বাসের চালকের এক সহকারী তাকে ধর্ষণের হুমকি দেয়।
মনিটরিং ব্যবস্থায় সমন্বয়ের অভাব থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া পরিবহন শ্রমিকরা নির্ধারিত বাস স্টপেজের পরিবর্তে যেকোনো স্থানে যাত্রী উঠাচ্ছে বা নামিয়ে দিচ্ছে। রাজধানীর গণপরিবহনের এরূপ বিশৃঙ্খল চলাচলের কারণে যাত্রীদের প্রচুর অর্থ ও সময় ব্যয় হচ্ছে।
আরও পড়ুন: শুধু ঢাকায় শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া
পরিবহন বিশৃঙ্খলার পেছনের কারণ
উত্তরা-কুড়িল-বাড্ডা-মালিবাগ-গুলিস্তান রুটে রাইদা, আলিফ, ইকবাল, ইউনিক, ভিক্টর, আকাশসহ বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির বাস চলাচল করে। মিরপুর-ফার্মগেট-গুলিস্তান সড়কে মিরপুর পরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহন রয়েছে।
গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর থেকে রামপুরা, বিমানবন্দর সড়ক থেকে মহাখালী-মগবাজার-মৌচাক পর্যন্ত প্রায় ২৯১টি রুটেই এসব পরিবহন চলতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ইউএনবিকে বলেন, রাজধানীর গণপরিবহনে চরম বিশৃঙ্খলাবিরাজ করছে। তাতে যাত্রীদের প্রতিনিয়ত হয়রানির স্বীকার হতে হচ্ছে। রাজধানীতে চলাচলকারী ৮৭ শতাংশ মিনিবাসে এই অবস্থা বিদ্যমান। এ বিষয়ে আসলে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেই, ফলে শৃঙ্খলা ফিরে আসছে না।
তিনি আরও বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা আনার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশ, বিআরটিএ, সিটি করপোরেশনগুলোর।
বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৩১ লাখ।
বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির তথ্য বলছে, রাজধানীতে চলাচল করছে আড়াই হাজারকোম্পানির প্রায় ৩০ হাজার বাস। রাজধানী ছাড়া সারা দেশে এক লাখের বেশি বাস চলাচল করে।
সারা দেশে ৭০ লাখ চালকের মধ্যে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) লাইসেন্স আছে মাত্র ১৬ লাখের। বাকি সব চালক অবৈধ।
বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ইউএনবিকে বলেন, গণপরিবহন বিশৃঙ্খলার জন্য অন্যতম দায়ী পরিবহন শ্রমিকরা। গণপরিবহন শ্রমিকদের আমরা বিভিন্নভাবে সচেতন করার চেষ্টা করছি। তবে আরও সময় লাগবে।
আরও পড়ুন: নিরাপদ সড়ক ও হাফ ভাড়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
গণপরিবহন সেবা শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে পদক্ষেপ
খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, নির্দেশের চেয়েও বেশি বাস ভাড়া নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের অনিয়ম ঠেকাতে মালিক, শ্রমিক ও ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে নয়টি টিম বিভিন্ন রুটে কাজ করছে।
কোনটি সিএনজিচালিত চলাচলকারী বাস ও কোনটি ডিজেলচালিত বাস সেটা বাসের গায়ে লিখা থাকতে হবে।
এছাড়া রাজধানীর অধিকাংশ চালকই দক্ষ নন। বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বিআরটিএ তাদের জন্য এককালীন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। এটি পুনরায় চালু করার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে।