করোনাকালীন শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিশুর পাশাপাশি আপনারও সুস্থ থাকা প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে শিশুরা করোনার ভয়ানক সংক্রমণের বাইরে থাকলেও এখন ধীরে ধীরে শিশুদের সংক্রমণের হার বাড়ছে। তাছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় যে কোনও রোগের বেলাতেই শিশুদের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। একই সাথে অনেক দিন ধরে ঘরে থাকার কারণে মানসিক অবসাদেও ভুগতে পারে আপনার শিশু। তাই করোনা থেকে আপনার শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতন থাকা জরুরি।
করোনাকালীন শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিতে আপনার করণীয়
শিশুর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করুন
অন্তত ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া থেকে শুরু করে হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় কনুইয়ে মুখ গুজা এবং মাস্ক ব্যবহার করার মত প্রাথমিক বাধ্যতামুলক স্বাস্থ্যবিধিগুলো খুব সহজ ভাষায় শিশুদেরকে বুঝিয়ে দিতে পারেন। বাইরে থেকে আগত কোনও লোকদের সংস্পর্শ থেকে শিশুকে দূরে রাখুন।
পরিবারের কোনও সদস্যের সর্দি, কাশি, জ্বর হলে তাদের কাছে যাওয়া থেকে শিশুদের বিরত রাখুন। এমনকি নিজেরও এরকম কোনও উপসর্গ দেখা দিলে দূরত্ব বজার রাখুন।
সামাজিক দূরত্বের ব্যাপারে তাদেরকে শিক্ষা দিন। এ সময়ে শিশুদের হালকা সর্দি-কাশি, জ্বর, পেট ব্যথা ইত্যাদি হালকাভাবে নেবেন না। শিশুকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে উৎসাহিত করুন।
আরও পড়ুন: কিভাবে আত্মবিশ্বাসের সাথে ইংরেজিতে বলা রপ্ত করবেন?
ঘরের সার্বিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখুন
এ সময়ে যেহেতু ঘরের ভেতরেই বেশি থাকা হচ্ছে সেহেতু ঘরের যে জায়গাগুলোতে মানুষের সংস্পর্শ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি সে জায়গাগুলো স্যানিটাইজ করুন। বিশেষত দরজার নব, চেয়ার-টেবিল, বিভিন্ন ফার্নিচারের হাতল, বিছানা এবং অবশ্যই রান্নাঘর পরিষ্কার রাখুন।
শিশুর ব্যবহৃত বালিশের কাভার, বিছানার চাদর সপ্তাহে অন্তত দু’বার বদলে দিন। মাস্কের পাশাপাশি শিশুকে হাতে নিয়মিত একটি পরিষ্কার কাপড় ও একটি ছোট্ট পকেট হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখুন। নিয়মিত পরনের কাপড় ধুয়ে দিন। তাছাড়া হঠাৎ ময়লা হয়ে গেলে সাথে সাথে কাপড় বদলে দিন।
আরও পড়ুন: কঠোর ডায়েটের স্বাস্থ্য ঝুঁকিসমূহ জেনে নিন
শিশুকে ইন্টারনেটের সদ্ব্যবহারে উৎসাহ দিন
করোনাকালীন শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে শিশুদের বিভিন্ন ভীড় থেকে বিরত রাখার কারণে তারা ঘরে বন্দি হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তাদের সময়গুলোর সদ্ব্যবহারের জন্য ইন্টারনেট একটা উপযুক্ত উপায়। স্কুল বন্ধের সাথে শিশুর পড়াশোনা যেন বন্ধ হয়ে না যায় সেজন্যে অনলাইন পড়াশোনায় আপনার শিশুকে নিয়ে সময় কাটান।
প্রযুক্তির প্রতিনিয় প্রসারের ফলে পাঠ্যক্রমের প্রতিটি বিষয় এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে অধ্যয়ন করা যায়। অনলাইন পাঠের বড় সুবিধা হলো- এখানে শিশু কোন চাপ অনুভব করবে না বরং নিজেই আনন্দ নিয়ে শিখবে। এছাড়া শুধু পড়াশোনাই নয়, ইন্টারনেট শিশুদের জন্য বিনোদনের এক বিশাল সংগ্রহশালা। এখন ঘরে বসেই অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার গেমগুলোতে একজন খেলোয়ার পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের খেলোয়ারদের সাথে প্রতিযোগীতা করতে পারছে।
এতে করে এই করোনার সময়ে আপনার শিশুকে খেলাধুলার জন্য বাইরে না যেতে জোর করতে হবে না। তবে খেয়াল রাখবেন আপনার শিশু যেন খারাপ কোনও সাইট বা গেমের প্রতি আসক্ত না হয়ে পড়ে। এর জন্য ইন্টারনেটের আপত্তিজনক সাইটগুলো ব্লক করে রাখবেন।
এছাড়া ইন্টারনেট আপনার শিশুর মেধা ও মননকে উন্নত করার জন্য এক গতিশীল মাধ্যম যা তার স্বভাবিক বিকাশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
আরও পড়ুন: সাইক্লিং, দৌড় কিংবা সাঁতার: ওজন কমাতে কোনটি বেশি কার্যকরী?
শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন
করোনা সম্পর্কিত গুজবে কান না দিয়ে সঠিক খবর জানুন। আক্রান্ত এবং মৃত্যুর খবরগুলো নিয়ে নিজেদের ভেতর আলোচনা করার সময় সতর্ক থাকুন। সংক্রমণ থেকে বাঁচার উপায়গুলো নিয়ে বেশি কথা বলুন।
কোথায় কোথায় কত মানুষ সংক্রমণ থেকে কত দ্রুত সেড়ে উঠেছে তা নিয়ে আলাপ করুন। এতে শিশুদের মনে ভীতির সঞ্চার ঘটবে না। শিশুরা প্রায় সব সময়ই বড়দের অনুকরণ করার চেষ্টা করে।
তাই নিজেরা করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তাদের সামনে দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করুন। আপনি যেভাবে আপনার শিশুকে সতর্ক করছেন খেয়াল ঠিক সেভাবেই ও আপনাকে অথবা অন্যদের সতর্ক করছে কিনা। এভাবে ব্যাপারটাকে খেলার ছলে শিক্ষা দিতে পারেন।
আরও পড়ুন: বর্ষায় পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে বাঁচতে করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন
শেষ কথা
সর্বোপরি করোনাকালীন শিশুর নিরাপত্তা রক্ষার্থে দেহ ও মন, দুটোকেই গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। শিশুদের শরীরের জন্য প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার দেয়া আর মনকে ঠিক রাখতে করোনার সংক্রমণের তথ্যগুলো ইতিবাচক ভাবে সরবরাহ করুন।